ইউটিউব

ইউটিউব কী? – ইউটিউব এর ইতিহাস

ইউটিউব ইতিহাস

ইউটিউবে হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় একটি ভিডিও শেয়ারিং সাইট।ইউটিউব এতই জনপ্রিয় একটি সাইট যে বিশ্বের সকল সাইটের মধ্যে দ্বিতীয়তে স্থান করে নিয়েছে।আজকে আপনাদের সাথে ইউটিউব নিয়ে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরবো।

ইউটিউব এমন একটি ভিডিও শেয়ারিং সাইট যেখানে নেই বলতে কিছুই নেই।এইখান থেকে আপনি যা চান তাই শিখতে পারবেন এমনকি মেয়েদের শাড়ি পড়া ছেলেদের লুঙ্গি পড়া থেকে এভারেস্টর এর চূড়ায় উঠারও টেকনিক পেয়ে যাবেন।

গুগলে প্রতি মিনিটে ইউটিউব সার্চ করা হয় 3.8 মিলিয়ন আর ২৪ ঘন্টায় সেটা দাড়ায় 5.6 বিলিয়ন।

চলুন ইউটিউব এর ইতিহাস জানার আগে জেনে নেই ইউটিউব এর প্রতিষ্ঠাতা কে কীভাবে তৈরী হলো এত বড় ভিডিও শেয়ারিং সাইট এর পেছনে কাদের কোন কোম্পানি গুলোর অবদান বেশী।

ইউটিউব এর প্রতিষ্ঠাতা এবং সদরদপ্তর কোথায়?

বিশ্ব ভালোবাসা দিবস ১৪ ফেব্রুয়ারি।ইউটিউব প্রতিষ্ঠা পায় ১৪ ফেব্রুয়ারি তবে সময়টা ছিল কিন্তু ২০০৫।যার বর্তমান বয়স ১৬ বছর।ইউটিউব তৈরী চাদ হার্লে, স্টিভেন চ্যান ও জাভেদ করিম।এখানে আমাদের জন্য গর্বের বিষয় হলো জাভেদ করিম একজন বাংলাদেশী বংশোদ্ভুদ এবং ইউটিউব এর সর্বপ্রথম ভিডিওটি এই বাংলাদেশী বংশোদ্ভুদ তরুণের (এই বিষয় নিয়ে পরবর্তীতে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে)।তারা বিশ্বের সবচেয়ে বড় মানি ট্রাস্নফার সাইট পেপ্যালে চাকরী করতেন।পেপ্যালে চাকরি হারানোর পর কি করবেন ভেবে পান না।এক পর্যায়ে তাদের মাথায় আসে ভিডিও শেয়ারিং সাইট নিয়ে।পরে তারা ইউটিউব নিয়ে কাজ শুরু করে দেন।কে জানত তখন তাদের এই সাইটি পুরো বিশ্বে এত জনপ্রিয় হবে।

তারা ২০০৫ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি সাইটটি পরীক্ষামূলক ভাবে চালু করে কিন্তু ২ মাস পর সর্বসাধারণের জন্য চালু হয়।পরে গুগল ২০০৬ সালের অক্টোবর মাসে সাইটটিকে ১.৬৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বিনিময়ে কিনে নেয়ে এখন এটি একটি গুগল এর একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান।

এবং ইউটিউব এর সদর দপ্তর ক্যালিফোর্নিয়াতে অবস্থিত।

ইউটিউবে বিনিয়োগকারি প্রতিষ্ঠান:

ভিডিও শেয়ারিং সাইট ইউটিউব প্রথম শুরু হয় খুব অল্প টাকা দিয়ে যার কারণে তিন প্রতিষ্ঠাতাকে অর্থ সংকটে পরতে হয়।কিন্তু যখন সাইটটি জনপ্রিয় হতে থাকে তখন একটি কোম্পানি এগিয়ে আসাতে ইউটিউব এর সুফল বয়ে আনে।সেকুয়া ক্যাপিটাল নামের কোম্পানিটি প্রথমবার ইউটিউবে বিনিয়োগ করে ৩৫ লক্ষ মার্কিন ডলার।সাইটটি যখন জনপ্রিয়তার শীর্ষে তখন সাইটটিতে দ্বিতীয়বারের মতো বিপুল অর্থ বিনিয়োগ করে কোম্পানিটি।দ্বিতীয়বার বিনিয়োগ করা অর্থের পরিমাণ ছিলো ৮০০০০০০ মার্কিন ডলার।পরবর্তীতে সাইটটি গুগল কিনে নেয় ১.৬৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এর বিনিময়ে।বর্তমানে সাইটটি গুগল এর একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান।

প্রথম ইউটিউব ভিডিও:

জনপ্রিয়তার শীর্ষে অবস্থানকারী এই ভিডিও শেয়ারিং সাইট এর প্রথম ভিডিওটি ইউটিউব প্রতিষ্ঠাতা এবং বাংলাদেশী বংশোদ্ভুধ জাভেদ করিম এর।১৯ সেকেন্ড এর এর ভিডিওটি “jawed” নামের ইউটিউব চ্যানেলে রয়েছে যার মোট ভিউ 30/9/2021 (দুপুর 12.32) তারিখ পর্যন্ত ১৮,৭৮,৬১,১৫২ টি এবং চ্যানেল সাবস্কাইব সংখ্যা ২২.৩ লাখ।মোট লাইক হয়েছে ৯০ লাখ এবং কমেন্ট ১,০৯,৬৬,১২০ টি।ভিডিওটি করা হয়েছে জাপানের একটি চিড়িয়াখানার সামনে।ডিডিওটির টাইটেল Me at the zoo.

ইউটিউব এর প্রথম ভিডিও হওয়ায় মানুষ একটু কৈাতুহল নিয়ে ভিডিওটি দেখে।আর সময়ওতো মাত্র ১৯ সেকেন্ড

সর্বশেষ ইউটিউব ভিডিও:

এত জনপ্রিয় একটি ভিডিও শেয়ারিং সাইটে সর্বশেষ ভিডিও কোনটা তা মনে হয় ইউটিউব এর প্রধানও জানে নাহ।কারণ আপনি জানলে শক খাবেন যে এই সাইটে প্রতি মিনিটে পুরো বিশ্ব থেকে ৪০০ ঘন্টারও বেশী ভিডিও আপলোড হয় এবং প্রতিদিন পুরো পৃথিবী থেকে আমরা ১ বিলিয়ন ঘন্টা ভিডিও দেখে থাকি আর হে এই পরিসংখ্যানটি প্রকাশিত হয়েছিল ২০১৭ সালে।হয়তো বর্তমানে তা আরও বহুগুণ বেড়ে গেছে।

বাংলার গর্ব ইউটিউব:

হ্যাঁ, এত বড় এই ভিডিও সাইটটি তৈরী হয়েছে বাংলাদেশের তরুণের হাত ধরে যা বর্তমানে পুরো বিশ্ব ব্যাবহার করছে।উপরে বলা হয়েছে জাভেদ করিম একজন বাংলা মায়ের সন্তান এর ছেলে।জাভেদের বাবা কাজ এর সুবাধে থাকতেন মার্কিন যুক্তরাষ্টে পরবর্তীতে সেখানে জার্মান বংশোদ্ভুত নারী ক্রিস্টেন করিমকে বিয়ে করেন নাইমুল করিম।পরে তাদের তাদের সৃষ্টিশীল সন্তান এর জন্ম হয় জার্মানিতে নাম রাখা হয় জাভেদ করিম।তিনি সলভিং ড্যাড পাজল, রে-ট্রেসার, থ্রিডি স্প্রিং সিমুলেশন, রোবোটিক ওয়েব ক্যাম সহ আরও অনেক প্রজেক্ট বাস্তবায়ন করেন।গুগল যখন ইউটিউব কে কিনে নেয় তখন জাভেদ অন্যদের থেকে কম মূল্যেই পেয়েছে কারণ তার পড়ালেখার চাপ এর জন্য শেষে তেমন সময় ইউটিউব নির্মাণ করাতে দেয়নি।জাবেদের প্রাপ্ত অর্থের পরিমাণ ছিল ৬৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।

বাচ্চাদের ইউটিউব:

বাচ্চাদের কথা মাথায় রেখে Youtube kids নামে আরেকটি ইউটি উব তৈরী হয়েছে ২০১৫ সালে। YT kids যেটা বাচ্চাদের জন্য এবং সম্পূর্ণ নিরাপদ।অ্যাপটি সম্পূর্ণ শিশু বান্ধব কারণ সেখানে রয়েছে:

শিশুদের জন্য

বড় আইকন এবং বড় ফন্ট।শিশুরা যাতে অতিরিক্ত সময় এইখানে না ব্যায় করতে পারে সেজন্য শিশুর অভিবাবকরা টাইমার সেট করে দিতে পারবে সেই টাইমস অনুযায়ী ইউটিউ ব কিডস নিজ থেকে বন্থ হয়ে যাবে।

ইউটিউব কিডস বাজারে আসে ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে।

ইউটিউব শর্টস:

সম্প্রতি সময়ে জনপ্রিয় অ্যাপ টিকটক, লাইকির কথা আমরা সবাই জানি।যেখানে ছোট ছোট ভিডিও করে ছাড়া হয়। কিন্তু উঠতি বয়সের তরুণরা এতে বেশি ঝুঁকে পড়ায় এটি বেশকিছু দেশ থেকে ব্লক করে দেয়া হয়েছে বাংলাদেশও তার ব্যাতিক্রম নয়।

এই সুযোগ কজে লাগিয়ে আরও কিছু কোম্পানি এই রকম কিছু অ্যাপ বাজারে ছাড়ে।গুগলও সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে ইউ_টিউবে একটি ফিচার অ্যাড করেছে যা ইউ_টিউব শর্ট নামে পরিচিত।যেখানে আপনাকে ১৫ সেকেন্ড এর ভিডিও আপলোড করার সুযোগ দেয়া হবে।

ইউটিউব এর নাম/ ডোমেইন নিয়ে আইনী জটিলতা:

ইউ টিউব এর নামটি কেন কী জন্য রাখা হয়েছে তা নিয়ে সম্পষ্ট ধারণা/ ব্যখ্যা কখনো দেয়া হয়নি।তবে নামটি Youtube রাখার কারণে ৩ প্রতিষ্টাতাকে অনেক কাঠ খড় পুড়াতে হয়েছে।কারণ ঐ সময় ইউনিভার্সাল টিউব কোম্পানির ওয়েবসাইট এর নাম ছিল utube.com. তারপরও ইউনিভার্সাল টিউব কম্পানির তেমন সমস্যা ছিল না আর থাকার কথাও না সমস্যাটি হয় যখন YT জনপ্রিয়তা পায় ঠিক তখন প্রচুর মানুষ ভুলবশত তাদের সাইটে চলে যেত এবং তাদের সাইটটি ওভারলোড হয়ে স্লো হয়ে যেত যার কারণে এক সময় ঐ তিন প্রতিষ্ঠার নামে মামলা ঠুকে দেয় তখন সালটি ছিল ২০০৬।কিন্তু পরবর্তীতে ইউনিভার্সাল টিউব কোম্পানিই তাদের ডোমেইনটি পরিবর্তন করেন।

ইউটিউব এর ব্যাবহার – ইউটিউব এর জনপ্রিয়তার কারণ:

চলুন এক নজরে জেনে নেই কেন এই ভিডিও শেয়ারিং সাইটটি এত জনপ্রিয়

শিক্ষা ক্ষেত্রে ইউটিউব এর ব্যাবহার:

আপনি কোনো একটি সাবজেক্ট এর অংক করতে গিয়ে আটকে পড়লেন।ঠিক তখন আপনি যদি কারও কাছে সাহায্যে না পান তাহলে আপনার স্মার্টফোনটা হাতে নিয়ে নেট কানেকশন দিয়ে খুব সহঝে সেই সমাধানটা ভিডিও শেয়ারিং সাইট Youtube এ খুব সুন্দর ব্যাখ্যা সহ পাবেন।

শুধু অংক কেন আপনি যে কোন বিষয় এর পড়া না বুঝলে খুব সুন্দর ব্যাখ্যাসহ এই ভিডিও শেয়ারিং সাইট থেকে বুঝে যাবেন।

বিনোদন ক্ষেত্রে ইউ টিউব এর ব্যাবহার:

যদি আপনার মনটা খারাপ থাকে তাহলে আপনি You Tube থেকে বিভিন্ন হাস্যকর জিনিস দেখে মনটা ভালো করে নিতে পারবেন।আনন্দ পেতে পারবেন।

পর্যটন কেন্দ্র ক্ষেত্রে ইউ টিউব এর ব্যাবহার:

আপনি যদি কোথাও ঘুরতে যেতে চান তাহলে সেই জায়গা সম্পর্কে খুব ভালো একটি ধারণা আপনি ইউ টিউব থেকে নিতে পারবেন।

মার্কেটিং বা পণ্য প্রমোট ক্ষেত্রে Youtube এর ব্যাবহার:

ইউটিউব এর মাধ্যমে আপনি আপনার কোম্পানির পণ্য প্রচার করতে পারবেন্।আবার অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করেও ইনকাম করতে পারবেন।

প্রযুক্তি ক্ষেত্রে ইউটিউব এর ব্যাবহার:

মনে করেন ওয়ালটন এর একটি নতুন পন্য বাজারে এসেছে অথবা আপনি একটি মাইক্রোফোন কিনতে চাচ্ছেন এখন আপনার সেই পণ্য ভালো না খারাপ সেটার কোনো ধারনা নেই তাই আপনি চাইলে ইউটি উব থেকে সেই পণ্যটি সম্পর্কে ধারণা পেতে পারেন দেখবেন অনেকে সেই প্রেডাক্টটি কিনে সেটার ভালো মন্দ সম্পর্কে বিস্তারিত দিয়ে রাখছে।

ইউ-টিউব লাইভ এর সুফল:

ইউটিউব এর একটি ফিচার হলো Youtube Live যেখানে কেউ কোনো বিষয়ে অভিঞ্জ হলে সেই ব্যাক্তি লাইভ আসবে এবং তাকে অন্যান্য লোকেরা প্রশ্ন করবে এবং তিনি উত্তর দিবেন।আরেকটু সহজ বাসায় বললে মনে করুন জনপ্রিয় বক্তা মিজানুর রহমান আজহারী হুজুর লাইভ আসলো এখন আমরা ওনাকে ইসলাম বিষয়ক বিভিন্ন প্রশ্ন করে ঞ্জান নিতে পারি।

জানা অজানা ক্ষেত্রে ইউ টিউব এর ব্যাবহার:

ইউটিউব এর সুফল বলে শেষ হবে নাহ এক কথায় বলতে গেলে জানা অজানা সব বিষয় আপনি ইউ-টিউব থেকে জানতে পারবেন।

শেষ কথা

ইউটিউব সম্পর্কে জেনে কেমন লাগল তা কমেন্টে জানিয়ে উৎসাহিত করবেন।এতে করে পরবর্তীতে আরও বিভিন্ন বিষয় নিয়ে লিথতে অনুপ্রেরণা পাবো।বন্ধুদের সাথে শেয়ার করে তাদের জানতে সাহায্যে করবেন।

ধন্যবাদ

www.learningdiagram.com

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *