বর্তমান এই যুগে সবচেয়ে প্রয়োজনীয় ইলেকট্রনিক্স যত্র্রের মধ্যে শীর্ষে রয়েছে কম্পিউটার।সেজন্য কম্পিউটারকে কিভাবে সুরক্ষা রাখা যায় সেই বিষয় নিয়ে আজকে আলোচনা করব।এই আর্টিকেলে আপনাদের সাথে শেয়ার করতে যাচ্ছি কম্পিউটার ভাইরাস কি এবং কীভাবে কম্পিউটার কে ভাইরাস থেকে মুক্ত রাখবেন।
কম্পিউটার ভাইরাস কী?
কম্পিউটার ভাইরাস মূলত এক ধরণের সফটওয়্যার, যা ধীরে ধীরে আপনার অপারেটিং সিস্টেমকে স্লো এবং এক পর্যায়ে বিকলাংক করে দিতে পারে।
এই সফটওয়্যারটির মূল উদ্দেশ্য হলো আপনার বা যার কম্পিউটারে প্রবেশ করানো হবে তার ক্ষতি সাধন করা।
কিন্তু সফটওয়্যার তৈরীর মূল উদ্দেশ্য কম্পিউটার পরিচালনা করা কিন্তু কিছু দুষ্টু প্রোগ্রামার ভাইরাস সফটওয়্যার তৈরী করেছে অন্যের ক্ষতি করার জন্য।
Virus (ভাইরাস) এর পূর্ণ রূপ:
ভাইরাস শব্দটির একটি পূর্ণ রূপ রয়েছে।ভাইরাস এর পূর্ণ রূপ হলো:
Virus= Vital information resources under seize.
ভাইরাসের কারণে কম্পিউটারে যেসব লক্ষণ দেখা দিবে:
কম্পিউটার ভাইরাস চোখে দেখাও যায় নাহ ছোয়াও যায় নাহ।তাহলে কীভাবে বুঝবেন আপনার কম্পিউটারটি ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে।চলুন জেনে নেই সখের পিসিতে বা কম্পিউটারে ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ গুলো কী কী?
অনেক সময় কম্পিউটারে ভাইরাস প্রবেশ করলে বুঝা যায় নাহ।কারণ একক ভাইরাস একেক কারণে তৈরী হয়েছে।ভাইরাস বেশ কিছু সমস্যা সৃষ্টি করবে যার মধ্যে কিছু কারণ নিচে দেওয়া হলো
1.আপনার কম্পিউটারটি স্লো কাজ করবে: যদি আপনি লক্ষ করেন কম্পিউটার তার স্বাভাবিক ঘতি হারিয়েছে।তাহলে বুঝে নিবেন আপনার কম্পিউটারটি ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে(তবে এই সমস্যাটি অনেক সময় র্যা ম হার্ডডিস্ক এর কারণে হয়ে থাকে।যদি স্টোরেজে পর্যাপ্ত জায়গা থাকার পরও এমন আচরণ করে তাহলে বুজে নিবেন ভাইরাসের জন্যই এমন করছে।)।এই বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার জন্য এবং মুক্তি পাওয়ার জন্য Anti-Virus Program এর বিকল্প নেই।
2.অপ্রত্যাশিত আচরণ: যদি আপনার পিসি বা ল্যাপটপ উইন্ডোতে নিজ থেকে পপ আপ শো করে বিঞ্জাপণ দেখায় অথবা আপনার কমান্ড দেওয়ার আগেই নিজ খেকে কম্পিউটার কাজ করে।
3.মেসেজ: যদি আপনার পিসিতে অনেক ধরণের ভাইরাস এক সাথে আক্রমণ করে তাহলে Error Message দেখাবে।
4.বিভিন্ন ফাইলে সমস্যা: যদি আপনি ফাইল খুলতে সমস্যায় পড়েন অথবা নিজ থেকে ফাইল বা প্রোগ্রাম তৈরী হয় তাহলে বুজে নেবেন কোনো শক্তিশালী ভাইরাস আপনার কম্পিউটারে ভাইরাস অ্যাটাক করেছে।
কম্পিউটার ভাইরাস এর জন্য যেসব ক্ষতি হয়:
Computer Virus মূলত তৈরী হয়েছে ক্ষতি সাধন করার জন্য।সেই ভাইরাস এর ক্ষমতা, শক্তি এবং কার্যকলাপ এর উপর নির্ভর করে আপনার পিসি বা ল্যাপটপে কতটুকু ক্ষতি হবে।তাছাড়া এই বিষয়ে নতুন করে কিছু লেখার নেই “ভাইরাসের কারণে কম্পিউটারে যেসব লক্ষণ দেখা দিবে” এই সেকশন আরেকবার পড়লেই বুঝে যাবেন।
কম্পিউটার ভাইরাস এর প্রকারভেদ:
বিশ্বজুড়ে অনেক প্রকারের কম্পিউটার ভাইরাস রয়েছে।কম্পিউটারের বা ল্যাপটপ এর ক্ষতিকারক কয়েকটি ভাইরাস এর সাথে আপনাদের পরিচয় করিয়ে দেব সে গুলো হলো:
Web scripting virus:
বর্তমানে খুবই প্রচলিত একটি ভাইরাস হলো Web scripting virus. ওয়েভ স্কিপটিং এমন এক ধরণের ম্যালওয়ার ভাইরাস যা ব্যাবহার কারীর অজান্তেই কম্পিউটার এর সিকিওরিটি সিস্টেম অতিক্রম করে কম্পিউটার সেটিংস ও ওয়েভ ব্রাউজার ওলট পালট করে নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেই।
Worms Virus:
মারাত্বক লেভেল এর চালাক একটি ভাইরাস বলতে পারেন এই Worms Virus কে।কারণ এই ভাইরাস গুলো তাদের Code প্রতিনিয়ত পরিবর্তন করে আপনার Computer Setting ঘুড়ে বেড়ায় যার কারণে এইগুলোকে শনাক্ত করা খুবই কঠিন একটি কাজ।যার কারণে এই ভাইরাস গুলো থেকে কম্পিউটারকে রক্ষ করা খুব কষ্টসাধ্য।
এইগুলোকে Self replicating Virus নামেও অবহিত করা হয়।
Browser Hijacker Virus
ভয়াবহ একটি ভাইরাস হলো এই ব্রাউজার হাইজ্যাকার কারণ এই ভাইরাসগুলো নিজের ইচ্ছামত আপনার ব্রাউজার সেটিংস পরিবর্তন করে এবং যখন আপনি কোনো ওয়েবসাইটে ঢোকার জন্য URL টাইপ করেন তখন আপনার কাঙ্খিত সাইটে না নিয়ে অন্য সাইটে নিয়ে যাবে।এমনকি অনাকাঙ্গিত বিজ্ঞাপণ, পপ-আপদেখাই।আপনার ডাউনলোড করা এস্কটেনশন, ফাইল এর সাথে এই গুলো প্রবেশ করে।
Trojans Virus
ট্রোজান ভাইরাসকে হ্যাকার এর হাতিয়ার বলতে পারেন কারণ হ্যাকাররা এই ভাইরাস ছড়িয়ে যে কারো কম্পিউটার এর তথ্য চুরি করে।
Direct Action Virus
ডিরেক্ট একশন ভাইরাস গুলো আপনাকে কিছু ফাইল বিশেষ করে .com .exe ফাইলকে খুলতে ও ডিলিট করতে বাধা দেয়।.com .exe ফাইলটি কার্যকর হলে ভাইরাসটি কাজ শুরু করে।
Overwrite Virus
এই ভাইরাস কম্পিউটার ফাইল গুলো ডিলিট করে নিজের মতো করে তৈরী করে ক্ষতি সাধন করে।
Malware
USB অথবা Pendrive এর মাধ্যমে ফাইল আদান প্রদান এর সময় এই ধরণের ভাইরাস ছড়ায়।এই ধনণের ভাইরাস কম্পিউটারকে বিকলাঙ্গ করে দিতে পারে।
Network Virus
নেটওয়ার্ক কার্যকারিতা হ্রাস করার ক্ষমতা নিয়ে তৈরী হয়েছে এই নেটওয়ার্ক ভাইরাস।স্থানীয় নেটওয়ার্ক ল্যান এর মাধ্যমে ছড়ায় এই ভাইরাস গুলো।
Resident Virus
রেসিডেন্ট ভাইরাস গুলো নিজেকে সঞ্চয় করে রাথে র্যা ম মেমোরিতে, পরে বিভিন্ন ফাইলে ধ্বংসযঙ্গ চালায়।
।
কম্পিউটারে যেভাবে ভাইরাস আক্রমণ করে:
কম্পিউটারে ভাইরাস প্রবেশের নিম্নে কয়েকটি কারণ তুলে ধরা হলো।এই গুলো থেকে সতর্ক থাকলে আশা করা যায় কম্পিউটারে ভাইরাস প্রবেশ হ্রাস পাবে।চলুন জেনে নেই কারণ এবং উপায় গুলো:
1.অনাকাঙ্গিত মেইল যেই মেইলটা এই মূহূর্তে আপনি আশা করছেন নাহ সেই রকম মেইল এর মধ্যে যদি কোনো ডাইনলোড অখবা অন্য কোনো লিংক থাকে যেগুলোতে ক্লিক করলেই বিভিন্ন ক্ষতিকারক ভাইরাস প্রবেশ করতে পারে।
2.দীর্ঘ সময় অ্যান্টিভাইরাস ছাড়া কম্পিউটারে নেট ব্যাবহার অথবা ডাউনলোড এর কারণে।
3.অনেক সময় ইন্টারনেট ব্যাবহার এর সময় আমরা লক্ষ করি বিভিন্ন পপ আপ আসে এবং বলা হয় ভাইরাস থেকে রক্ষা পেতে অ্যান্টি ভাইরাস ডাউনলোড করতে বলা হয় মূলত সেই গুলো ডাউনলোড করলেই কম্পিউটারে ভাইরাস প্রবেশ করতে পারে।তাই অ্যান্টিভাইরাস ডাউনলোড করতে এইসব থার্ট পার্টি ওয়েবসাইট এড়িয়ে চলুন।
4.অন্য কোনো কম্পিউটার অথবা মোবাইল থেকে ফাইল আনা নেওয়ার সময় সেই ডিভাইস থেকে সংক্রমিত হবে।
5.প্রয়োজনে অপ্রয়েজনে আমাদের অনেক সফটওয়্যার ইনস্টল করতে হয় সেসময় অনেক কিছু পারমিশন চায় যে গুলো না পড়ে না বুঝে পারমিশন দেওয়র ফলে কম্পিউটার ঝুকির মধ্যে পড়ে যায়।
6.কোনো কিছু ডাউনলোড এর ক্ষেত্রে তৃতীয় পক্ষের ওয়েবসাইট এড়িয়ে চলুন।
ভাইরাস থেকে কম্পিউটারকে রক্ষা করার উপায়:
কম্পিউটারে যাতে ভাইরাস প্রবেশ করে ধ্বংসযঞ্জ চালাতে না পারে সেজন্য আপনাকে বেশ কয়েক ধরণের কৌশল অবলম্বন করতে হবে।যদি আপনার কম্পিউটারটি ইন্টারনেট এর কাজে ব্যাবহার করেন তাহলে আপনার কম্পিউটারে ভাইরাস প্রবেশ করার সম্ববনা থাকে।সেজন্য আপনার কম্পিউটারে Internet security antivirus ব্যাবহার করতে পারেন।
অন্যের কম্পিউটার থেকে ফাইল আদান প্রদান করার সময় ফাইলটি অবশ্যই অ্যান্টিভাইরাস দিয়ে পরীক্ষা করে নিবেন। সেজন্য আপনি Avast, বা অন্য একটি ভালো মানের Antivirus ব্যাবহার করতে পারেন।
ফ্রি অ্যান্টিভাইরাস থেকে পেইড অ্যান্টিভাইরাস বেশী কার্যকরী।
অ্যান্টিভাইরাস ডাউনলোডে সতর্কতা:
অনলাইন থেকে ডাউনলোড করার সময় অবশ্যই যেই অ্যান্টি ভাইরাস ডাউনলোড করবেন সেই অ্যান্টি ভাইরাস এর অফিশিয়াল সাইট থেকে ডাউনলোড করবেন।অন্যথায় ওরিজিনালটা পাবেন নাহ আবার সেই সাথে ভাইরাসও ঠোকার সুযোগ থাকে।যার কারণে কম্পিউটারের গতি কমে যাবে।
তৃতীয় পক্ষের Website থেকে ডাউনলোড করবেন নাহ।আবার কখনো যদি দেথেন তৃতীয় পক্ষের সাইটে এন্টি ভাইরাস এর পেইড ভার্সন ডাউনলোড এর ক্ষেত্রে মূল্য ছাড় দিছে তাহলে ভুল করেও সেগুলো ক্রয় করবেন নাহ তাহলে দেখা যাবে আপনি টাকা দিয়ে কম্পিউটার এর জন্য ক্ষতিকর ভাইরাস ক্রয় করছেন।
কম্পিউটার থেকে ভাইরাস প্রতিরোধের উপায়:
আপনি যদি কম্পিউটার চালানোর সময় বুঝতে পারেন আপনার কম্পিউটারটি ভাইরাসে আক্রান্ত তখন তেখন আপনার একটি ভালো মানের অ্যান্টি ভাইরাস প্রয়োজন হবে।তাই একটি ভালো মানের এন্টি ভাইরাস ডাউনলোড করে স্ক্যান করিয়ে নিন।তারপরও কাজ না হলে পেইড ভার্সন ব্যাবহার করে ভাইরাস মুক্ত করুন।অনেক শক্তিশালী পেউড ভার্সনেও ডিলিট সম্ভব হয় নাহ তখন আপনাকে পুরো সিস্টেমটি রিস্টোর্ট করে পুনরায় সেটআপ করতে হবে।তাই আপনাকে প্রয়োজনীয় ফাইল এর বেকআপ আগে থেকে নিয়ে রাখতে হবে।
তখন নতুন করে Windows Setup করা ছাড়া বিকল্প উপায় থাকে নাহ।
কম্পিউটার ভাইরাস এর ইতিহাস:
Computer Virus সম্পর্কে মোটামুটি অনেক তথ্য দেয়া হয়েছে।চলুন এখন একটু এই ভাইরাস তৈরীর ইতিহাস জেনে নেই:
Computer Virus প্রথম তৈরী হয় ১৯৭১ সালে Robert Thomas নামক এক ব্যাক্তির হাত ধরে যিনি ডেভেলপ এর কাজে এই ধরণের মজাদার ভাইরাস তৈরী করেন।ভাইরাসটির নাম ছিল Creeper Virus.
পরবর্তীতে Richard Skrenta নামক অন্য আরেক ব্যাক্তি Floppy disks এর সাহায্যে Apple II এর operating system কে Infected করেন।এটিকে Malicious Program ও বলা হয়।
পরে ১৯৮৩ সালে অন্য আরেক ব্যাক্তি এর নাম করেন কম্পিউটার ভাইরাস।এর পর থেকে বিভিন্ন দুষ্ট প্রকৃতির হ্যাকাররা একে আরও ডেপেলপ করে এবং ক্ষতিকর করে তুলে।এই ছিলো কম্পিউটার ভাইরাস এর সংক্ষিপ্ত ইতিহাস।
ধন্যবাদ