রাজা তৃতীয় চার্লস

রাজা তৃতীয় চার্লস – King Third Charles

ইতিহাস ব্রিটেন এর রাজ পরিবার

ব্রিটেনের রাজ পরিবারের ইতিহাসে সিংহাসনের জন্যে সবচেয়ে বেশি সময় উত্তরাধীকারি সূত্রে অপেক্ষা করেছেন প্রিন্স চার্লস।প্রিন্স চার্লস এর সিংহাসন এর জন্য অপেক্ষার সময় ছিল দীর্ঘ ৭০ বছররানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ এর মৃত্যুর পর রাজা তৃতীয় চার্লস বা চার্লস ফিলিপ আর্থার জর্জ  হবেন ব্রিটেনের শাসক।এই আর্টিকেল এর মাধ্যমে ব্রিটেনের রাজা তৃতীয় চার্লস সম্পর্কে আলোচনা করব:

রাজা তৃতীয় চার্লস এর জন্ম:

রাজা তৃতীয় চার্লস রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ ও ফ্রিন্স ফিলিপ এর বড় ছেলেরাজা তৃতীয় চার্লস ১৯৪৮ সালের ১৪ নভেম্বর জন্মগ্রহণ করেন।রাজা ষষ্ঠ জর্জ তৃতীয় চার্লস এর জন্মে পূর্বে রাজা পত্রের মাধ্যমে ঘোষণা করেন যে প্রিন্সেস এলিজাবেথ এবং ফিলিপ দম্পত্তির কোন সন্তান জন্মগ্রহণ করলে সে রাজকুমার এর মর্যাদা প্রাপ্ত হবে। “মুক্ত বিশ্ব কোষ – উইকিপিডিয়া এর তথ্য অনুসারে রাজা তৃতীয় চার্লস ৯ টা বেজে ১৪ মিনিটে বাকিংহাম প্রাসাদে জন্ম গ্রহণ করেন

তৃতীয় চার্লস এর পড়াশুনা:

চার্লস ছিলেন ব্রিটিশ রাজ পরিবারের এক মাত্র ব্যাক্তি যে কিনা প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা লাভের সুযোগ পেয়েছিলেন।এর ফলে তিনি প্রাসাদের অভ্যন্তরে শিক্ষা লাভের পর তিনি লন্ডন হ্যাম্পশায়ার এবং স্কটল্যান্ডে পড়াশোনা করেন।এরপর ১৯৬৭ সালে কেমব্রিজের ট্রিনিটি কলেজে ভর্তি হন।এছাড়া রাজা তৃতীয় চার্লস এর অধ্যায়ন করা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে অ্যাবেরিস্টিথ ইউনিভার্সিটি কলেজ অব ওয়েলস এবং রয়্যাল এয়ারফোর্স কলেজ ও ডার্টমাউথের রয়্যাল নেভাল কলেজ।

বি:দ্র:রাজা তৃতীয়আট বছর পর্যন্ত প্রাসাদে পড়াশুনা করেন।

রাজার নাম:

রাজা তৃতীয় চার্লস এর পূর্ব নাম চার্লস ফিলিপ আর্থার জর্জ।রাজা হওয়ার পর প্রথমে তিনি তার নাম পরিবর্তন করে তৃতীয় চার্লস রাখেন।কারণ রাজা হিসেবে অভিষেক এর পর অনেক রাজায় তার নাম পরিবর্তন করেন।সেই হিসেবে চার্লস ফিলিপ আর্থার জর্জ “King the Third charles বা রাজা তৃতীয় চার্লস” হিসেবে পরিচিতি পেতে চান।

রাজা তৃতী চার্লস এর বৈবাহীক জীবন:

তিনি ১৯৮১ সালে ডায়ানা প্রিন্সেস অব ওয়েলকে বিবাহ করেন।কিন্তু ১৯৯৬ সালে ডায়ানার সাথে চার্লস ফিলিপ আর্থার জর্জ এর বিবাহ বিচ্ছেদ হয় এবং ১৯৯৭ সালে ডায়ানা রোড এক্সিডেন্টে মারা যান।

রাজা তৃতীয় চার্লস এর প্রথম স্ত্রী ডায়ানার মৃত্যুর পর তাকে নিয়ে প্রচুর সমালোচনা হয়।এবং সমগ্র ব্রিটেনে তিনি সবচেয়ে অজনপ্রিয় রাজকীয় ব্যাক্তি হয়ে উঠেন।

এরপর ২০০৫ সালে ক্যামিলা পার্কারকে বিয়ে করেন।ক্যামিলা এখন ব্রিটেনের কুইন কনসোর্ট বাংলায় সঙ্গী রানী।কেননা ব্রিটেনের নিয়ম অনুযায়ী রাজার স্ত্রী সরাসরি রানী নয় আবার রানীর স্বামী সরাসরি রাজা নন

প্রিন্স উইলিয়াম ও প্রিন্স হ্যারি অব ওয়েলস হলো ডায়ানা ও তৃতীয় চার্লস এর সন্তান

সিংহাসনে আরহণ:

ব্রিটেনের রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ এর মৃত্যুর পর প্রিন্স চার্লস “তৃতীয় চার্লস” উপাধি নিয়ে সিংহাসনে বসেন।ব্রিটেনের ইতিহাসে তিনি একমাত্র ব্যাক্তি যে সিংহাসনের দাবিদার হিসেবে সবচেয়ে দীর্ঘ সময় (৭০ বছর) পারি দিয়েছেন।

ব্রিটেনে শুরু হলো চার্লস যুগের এবং রাজা হিসেবে ঘোষণা করা হয় তৃতীয় চার্লস এর নাম।১০ সেপ্টেম্বর ২০২২ তারিখ সকালে রাজার অভিষেকের অনুষ্ঠান শুরু হয় ইতিহাস ঐতিহ্য মেনে।বিট্রিশ রাজ পরিবারের হাজার বছরের ঐতিহ্য মেনে শুরু রাজার অভিষেক এর আয়োজন।অন্যদিকে ব্রিটেনের এতিহাসে এটিই প্রথম যা সরাসরি সম্প্রচার হয় টেলিভিশনে। রাজা তৃতীয় চার্লস রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ এর মৃত্যুর পর সিংহাসনের উত্তরাদীকারীদের মধ্যে প্রথমে রয়েছিলেন।রাজা তৃতীয় চার্লস “প্রিন্স অব ওয়েলস এন্ড আর্ল অব চেস্টার” পদবীটি ১৯৫৮ সালে পান।রাজা তৃতীয় চার্লস এই অনুষ্ঠানে ইংরেজী ও ওয়েলস উভয় ভাষায় বক্তব্য দেন।তিনি তার মা রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ এর মৃত্যুর পরপরই সয়ংক্রিয় ভাবে রাজা হন কারন ব্রিটিশ রাজ সিংহাসন কখনো খালি রাখার নিয়ম নেই।তবে আনুষ্ঠানিক ভাবে রাজা হিসেবে ঘোষণা করা হয় ১০ সেপ্টেম্বর ২০২২ তারিখে।ব্রিটেনের রাজ সিংহাসন খালি রাখার নিয়ম না থাকায় ৮ সেপ্টেম্বর রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ এর মৃত্যুর পর চার্লস ফিলিপ আর্থার জর্জ সয়ংক্রিয় ভাবে রাজা হন এবং নাম রাখেন রাজা তৃতীয় চার্লস

রাজা তৃতীয় চার্লস এর ক্ষমতা ও তার শাসন এলাকা:

চার্লস শুধু বিট্রেনের নয় কমনওয়েলথ ভুক্ত ৫৪টি দেশ এর মধ্যে ১৪ টি দেশের রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন।দেশগুলো হলো: যুক্তরাজ্য, বারবাডোস, কানাডা, বাহামাস, গ্রেনাডাপাপুয়া, নিউগিনি, সলোমন দ্বীপপুঞ্জ, জামাইকা, অস্ট্রেলিয়া, সেন্ট লুসিয়া, নিউজিল্যান্ড, টুভালু, সেন্ট ভিনসেন্ট ও গ্রেনাডাইন, বেলিজ, অ্যান্টিগুয়া ও বার্বুডা এবং সেন্ট কিট্স ও নেভিস

তৃতীয় চার্লস এর জীবনের কিছু ঘটনা:

১৯৭০ সালের বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রী অর্জন করার পর পারিবারীক ঐতিহ্য অনুযায়ী সামরীক বাহিনীতে যোগদান করেন এবং ৭ বছর কর্মরত থাকেন এবং আরএএফ পাইলট হিসাবেও উত্তীর্ণ হন পরে রাজকীয় নৌবাহিনীতে বদলী হন।এছাড়াও রাজা তৃতীয় চার্লস কঠোর সামরীক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করায় “অ্যাকশন ম্যান” খেতাব জয়ী হনসামরীক মহড়ার সিরিজে  “প্লেন থেকে ঝাঁপ দেওয়া” “ডুবোজাহাজ থেকে পালানো” “ডুবুরি ও কমান্ডো হিসেবে প্রশিক্ষণ নেন”চা র্লস রাজকীয় নৌবাহিনীতে যোগ দানের পর একাধীক জাহাজে কাজ ও চূড়ান্ত মেয়াদের দায়িত্ব পালনের জন্য মাইন হান্টার এইচএমএস ব্রনিংটনের কমান্ড নেন

এছাড়া রাজা তৃতীয় চার্লস পড়ালেখার পর ১৯৭১ খেকে ১৯৭৬ পর্যন্ত নেভীতে সফরকালীন দায়িত্ব পালন করেন।প্রিন্স অব ওয়েলস ইনস্টিটিউট অব আর্কটেকচার নামে একটি প্রতিষ্ঠা গঠন করেন ১৯৯২ সালে।কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি পরে শহর পুণর্গঠন ও উন্নয়ন প্রকল্প পরিচিত বিআরই ট্রাস্টের সাথে এক হয়।এছাড়াও সিংহাসনে তিনি একমাত্র উত্তরাধীকারী যে কিনা একটি ডিগ্রী সম্পন্ন করেছেন।

বিশ্বের জলবায়ু মোকাবেলায় তিনি অনেক কাজ করেছেন পুরো বিশ্বের বন রক্ষায় তিনি একটি প্রজেক্ট চালু করেন।বন রক্ষায় ২০০৭ সালে তার প্রতিষ্ঠিত প্রজেক্ট এর নাম হলো “প্রিন্স রেইন ফরেস্ট প্রজেক্ট”

চার্লস ফিলিপ আর্থার জর্জ ব্রিটেনের তৃতীয় রাজা হওয়ায় যেসব সুযোগ সুবিধা – অসুবিধা ভোগ করবেন:

রাজা তৃতীয় চার্লস এর সুযোগ-সুবিধা গুলো হলো তিনি বিশ্বের যেকোনো দেশ কোনো পাসপোর্ট ছাড়াই ভ্রমণ করতে পারবেন কেননা এখন থেকে ব্রিটেনের সকল পাসপোর্ট তার নামে ইস্যু হবে।এছাড়াও একই কারণে এর কোনো ড্রাইভিং লাইসেন্স এর প্রয়োজন নেই।

এছাড়াও ব্রিটেনের রাজা তৃতীয় চার্লস বছরে দুইটি জন্মদিন পালন করবেন।

অন্যদিকে দেশের সরকার নির্বাচনে তিনি থাকবেন নিরপেক্ষ কোনো প্রকার ভোটে অংশগ্রহণ করতে পারবেন নাহ কিন্তু নিয়ম অনুযায়ী প্রতি সপ্তাহে একবার নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা করবেন।

ধন্যবাদ

www.learningdiagram.com

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *