ফিফা বিশ্বকাপ ট্রফি

ফিফা বিশ্বকাপ ট্রফি – Fifa World cup trophy

খেলা ধূলা

The greatest show on earth – ফিফা বিশ্বকাপ নিয়ে মানুষের মাঝে উন্মাদনার শেষ নেই।পুরো বিশ্বজুড়ে রয়েছে এর কদর।চার বছর পর অনুষ্ঠিত হয় এই ফিফা বিশ্বকাপ।এই বিশ্বকাপ এর জয়ী দলকে দেওয়া হয় ৬.১৪২ কেজি ওজনের স্বর্ণের ট্রফি।২০২২ সাল পর্যন্ত ফিফা বিশ্বকাপ ট্রফির জন্য লড়াই করেছে ৩২ টি দেশ কিন্তু ২০২৬ সাল থেকে লড়াই করবে ৪৮ টি দেশ এই একটি ট্রফির জন্য।চলুন এই পর্বে জানি ফিফা বিশ্বকাপ এর মূল্যবান ট্রফি সম্পর্কে:

ফিফা বিশ্বকাপ ট্রফি:

ফিফা বিশ্বকাপ ট্রফি সম্পর্কে বলার আগে বলে নেই আমরা আজকে যেই ট্রফি দেখি সেটি কিন্তু আগে ছিল না।এই ট্রফির আগে ছিল জুলে রিমে ট্রফি যার ইংরেজি নাম ভিক্টোরি ট্রফি এবং পরে আসছে আজকের বর্তমান ফিফা বিশ্বকাপ ট্রফি।এই বিশ্বকাপ ট্রফি কোউপ ডু মোল্ড নামেও পরিচিত।চলুন জানি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বিশ্বকাপ ট্রফির ইতিহাস:

 

বিশ্বকাপ এর পুরাতন ট্রফি সম্পর্কে:

এক উত্তেজনা পূর্ণ খেলা ফিফা বিশ্বকাপ এর পুরাতন ট্রফি সম্পর্কে জানা অজানা তথ্য:-

জুলে রিমে ট্রফির বৈশিষ্ট ও তাৎপর্য:

জুলে রিমে ট্রফিটি গ্রীক পুরান এর বিজয়ের দেবীকে ফূটিয়ে তোলা হয়েছে যার হাতে ১০ কোণা বিশিষ্ট কাপ রয়েছে।জুলে রিমে ট্রফির ডিজাইন করেছেন ফ্রেঞ্চ ভাস্কর আবেল লেফলয়োর।সোনায় মোড়ানো রুপায় তৈরী লাপিস লাযুলির ভীতের উপরে দাড় করানো এই ট্রফিটির ওজন ৩.৮ কেজি।জুলে রিমে ট্রফিটি সোনালী দেবী নামেও প্রচলিত ছিল।এই ট্রফিটিতে ১৯৩০ থেকে ১৯৭০ সাল পর্যন্ত বিশ্বকাপ জয়ী দেশের নাম খোদাই করে লিখা আছে।

ফিফা বিশ্বকাপ ট্রফি জুলে রিমে ট্রফির নামকরণ ও ইতিহাস:

জুলে রিমে মূলত ফিফার ৩য় প্রেসিডেন্ট এর নাম।এবং বিশ্বকাপ ট্রফির নাম জুলে রিমের নামানুসারে করা হয়েছিল কেননা বিশ্বে ফুটবল এর আধিপত্য বিস্তারে এবং জনপ্রিয়, ফিফা ফেডারেশন কে এত শক্তিশালী করতে জুলে রিমের অবদান বিশ্ববাসী কখনো ভুলবে নাহ।জুলে রিমে দীর্ঘ ৩৩ বছর সম্মানের সাখে ফিফা প্রেসিডেন্ট এর দায়িত্বপালন করেছিলেন।তিনি দায়িত্ব কালে ৪ বছর পর পর ফিফা বিশ্বকাপের আয়োজন করার জন্য সরকারী উচ্চ কর্মকর্তা ফুটবল ক্লাব জাতীয় দল গুলোকে নিয়ে এই বিশ্বকাপ শুরু যাত্রা ছিল অত্যান্ত কঠোর কাজ।জুলে রিমের অবসরের সময় ফিফা ফেডারেশন এর সদস্য দেশ বৃদ্ধি পেয়েছিল ৩ গুণ।এছাড়াও জুলে রিমে ১৯২৯ সালে আন্তঃদেশীয় ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপ আয়োজনের পক্ষে ভোট দিয়েছিলেন এবং পরের বছর বিশ্বফুটবল জয়ী হয় আর্জেন্টিনাকে হারিয়ে উরুগুয়ে হয় এবং বিশ্বকাপ জয়ী দল উরুগুয়ের হাতে এই ট্রফি তুলে দেন ১৯৩০ সালে।ফিফা বিশ্বকাপ ইতিহাসে তার এই অসমান্য অবদান এবং তৎকালীন ফিফার প্রেসিডেন্ট জুলে রিমে কে শ্রদ্ধা ভরে স্বরণ করতে এই ট্রফির নাম করণ করা হয়েছে জুলে রিমে ট্রফি।

  • নোট: ফিফা বিশ্বকাপ জয়ী প্রথম পরেুষ ফুটবল দল উরুগুয়ে

ফিফা বিশ্বকাপ ট্রফির চুরি ও উদ্ধার ইতিহাস:

এই মূল্যবান জুল রিমের ট্রফিটি বেশ কয়েকবার চুরি হয়েছিল – চলুন বিশ্বকাপ ট্রফিটি চুরির ইতিহাস জেনে আসি;

বিশ্বকাপ ট্রফির প্রথম চুরি ও উদ্ধার ইতিহাস ঘটনা:

১৯৩৮ সালে পুরো বিশ্বজুড়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রস্তুতি তখন ট্রফিটি ছিল ইতালির কাছে আর ইটালিয়ান ফুটবল ফেডারেশনের প্রেসিডেন্ট অটোরিনো বারাসি এবং ফিফা সহ সভাপতি ব্যাংক এর ভল্ট থেকে গোপণে সরিয়ে প্রেসিডেন্ট অটোরিনো বারাসি তার বিছানার নিচে জুতার বক্সে রেখে দেয় যাতে কেউ খুজে না পায় এই মহামূল্যবান ট্রফি এবং বিশ্বজুড়ে ছরিয়ে পড়ে ট্রফিটি চুরি হয়েছে।মূলত যুদ্ধের সময় নিরাপত্তা জনিত কারণে এই নাটকটি সাজানো হয় পরে আবার বিশ্বকাপটি দ্বিতীয় বারের মতো জয়ী দেশ উরুগুয়েকে পুরষ্কিত করা হয় ১৯৫০ সালে

 

  • নোট: ১৯৪২ ও ৪৬ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের জন্য ফিফা বিশ্বকাপ এর আয়োজন হয়নি

 

বিশ্বকাপ ট্রফির দ্বিতীয় চুরির ঘটনা:

এইবার সত্যি সত্যি ফিফা বিশ্বকাপ জুলে রিমে ট্রফি চুরি হয়, তখন সময় ছিল ১৯৬৬ সাল এবং ফিফা বিশ্বকাপ এর বাকি আর মাত্র ৪ (চার) মাস।২০ মার্চ ১৯৬৬ সালে ২৪ ঘন্টা কড়া পাহারার মধ্যেও ওয়েস্ট মিনিস্টার সেন্ট্রাল হল থেকে ট্রফিটি চুরি হয়।দিত্বীয়বারের মতো বিশ্বকাপ ট্রফিটি চুরিতে বিশ্বজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়।অন্যদিকে লন্ডন পুলিশ ট্রফিটির খুজে ১৫ হাজার পাউন্ড পুরষ্কার ঘোষণা করে।আবার বিশ্বকাপ এর ৪ (চার) মাস বাকি থাকায় ব্রিটেন তথা ইংরেজরা আরেকটি রেপ্লিকা ট্রফি তৈরীর সিদ্ধান্ত নেয়।কিন্তু কিছুদিন পর “পিকলস” নামে এক কুকুর দক্ষিণ লন্ডনের এক বাগান থেকে সংবাদপত্রে আবদ্ধ অবস্থায় ট্রফি উদ্ধার করে আলোড়ন সৃষ্টি করে দেয় এবং বিশ্বকাপ জয়ের পর কুকুর পিকলস ও কুকুরের মালিক ডেভিড করবেটকে রাতের ভুজনে এনে ৬ হাজার পাউন্ড ও কুকুর পিকলস এর সারা জীবন ডগ ফুড এর দায়িত্ব নেওয়া হয়।অন্যদিকে নিরাপত্তা জনিত কারণে রেপ্লিকা ট্রফিটি বিক্রি করা হয় ফিফার কাছে ২৫৪,৫০০ পাউন্ডের বিনিময়ে

ফিফা বিশ্বকাপ এর তৃতীয় চুরি:

তৎকালীন নিয়ম অনুসারে কোনো দল যদি তিনবার বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয় তাহলে সেই দেশকে ট্রফিটি দিয়ে দেওয়া হবে।ব্রাজিল যখন ১৯৭০ সালে তৃতীয় দফা বিশ্বকাপ জিতে তখন ট্রফিতে সারাজীবন এর জন্য তাদের দিয়ে সম্মান জানানো হয়।কিন্তু ডিসেম্বর ১৯৮৩ তে সোনালী গ্রিক দেবী ওরফে জুলি রিমে ট্রফি ব্রাজিল এর ফুটবল ফেডারেশন ডিসপ্লে কেবিনেট এর বুলেট প্রুফ গ্লাস এর ভেতর থেকে চুরি হয় যা আর উদ্ধার হয় নি।তবে এই চুরির জন্য চার জন ব্যাক্তিকে জিঞ্জাসাবাদ করা হয় কিন্তু ফিফা বিশ্বকাপ ট্রফিটি পাওয়ার ব্যাপারে কোনো অগ্রসর হওয়া যায়নি। প্রচলিত আছে ট্রফিটি গলিয়ে ফেলা হয়েছে।আবার অনেকের মতে ট্রফিটি ভেঙে টুকরো করা হয় এবং যার এক টুকরো ২০১৫ সালে উদ্ধার হয়।চুরির পরবর্তী সময়ে ১.৮৮ কেজি (৩.৯৭ পাউন্ড) স্বর্ণ দিয়ে ইস্টম্যান কোডাক কে দিয়ে রেপিল্কা ট্রফি তৈরী করেছে বর্তমানে পাচ বার বিশ্বকাপ জয়ী দেশ ব্রাজিলিয়ানরা।

ফিফা বিশ্বকাপের নতুন ট্রফির ইতিহাস ও বর্তমান ট্রফি:

ফিফা বিশ্বকাপ ট্রফি তৃতীয় বিশ্বকাপ জয়ের পর ১৯৭০ ব্রজিলকে দিয়ে দেওয়ার পর বর্তমান Trophy তৈরী করা হয়।যদিও এখন এই নিয়মটি আর নেই কিছুদিন আগে ছিল (২০০৬ সাল পর্যন্ত) জয়ী দলের কাছে পরবর্তী বিশ্বকাপ এর মূল পর্বের ড্র পর্যন্ত ট্রফিটি থাকবে কিন্তু ২০০৬ সাল এর পর থেকে জয়ী দলকে সোনার আবরণে মোড়ানো ব্রোঞ্জের রেপ্লিকা ট্রফি দেয়া হয়।২০১৬ সাল থেকে সুইজারল্যান্ডের জুরিখের ফিফা ওয়ার্ল্ড ফুটবল মিউজিয়ামে এই মহা মূল্র্যবান ট্রফিটি সংক্ষিত থাকে।

নতুন ট্রফি সম্পর্কে জানা অজানা তথ্য:

নতুন বিশ্বকাপ ট্রফির ডিজাইন:

১৯৭১ সালে সিল্ভিও গাজ্জানিগা ২টি সহ ৭ টি দেশের ভাস্করা ৫৩ টি ডিজাইন প্রদান করে ফিফাকে এবং সেখানে সিল্ভিও গাজ্জানিগার প্রথম ট্রফিটি গৃহীত হয় এবং ১৯৭৪ সালে সর্বপ্রথম নতুন বিশ্বকাপ ট্রফিটি জয় করে জার্মানি।

বিশ্বকাপ ট্রফি তৈরীর পর গাজ্জানিগার লাভ:

ফিফার শর্ত (“বিজয়ী তার কাজের স্বত্ত্বাধিকার রাখবে না”) অনুযায়ী ডিজাইনার গাজ্জানিগা সরাসরি কোনো মুনাফা না পেলেও তিনি আরও অনেক গুলো বিশ্বকাপ ট্রফি যেমন উয়েফা কাপ, ইউরোপিয়ান সুপার কাপ ইত্যাদির ডিজাইনার তিনি, তার ভাষ্যমতে এটিই ছিল তার লাভ।

নতুন ফিফা বিশ্বকাপ ট্রফির বৈশিষ্ট্য:

৬.১৪২ কেজি এবং ৩৬.৮ সেন্টিমিটার উচ্চতার ফিফা বিশ্বকাপ ট্রফি টিতে রয়েছে ১৮ ক্যারেট এর ৫ কেজি স্বর্ণ।এই ট্রফির ১৩ সেন্টিমিটার ব্যাস এর ভীতটির দুই স্তরের ম্যালাসাইট দ্বারা আবৃত যা সবুজ ফুটবল মাঠ এর প্রতীক হিসেবে রয়েছে এবং কাপটির উপরে রয়েছে দুটি মানুষের মূর্তি।এই মূ্র্তি দুটি গোলাকার কিছু একটা ধরে রেখেছে যাহা পৃথিবী, ফুটবল এবং মহাদেশগুলোর ছবিকে প্রতিফলিত করে আবার গাজ্জানিগা ব্যাখ্যা করেছেন “দুইজন খেলোয়াড় তাদের বাহুগুলোকে ছড়িয়ে দেওয়ার মাধ্যমে বিজয় উল্লাস ও আনন্দঘন মুহূর্তকে চিত্রিত করে’।অন্যদিকে, খেলোয়ারদের প্রতিবিম্বাকার মধ্যের লাইন গুলো যে ছড়িয়ে পড়েছে পুরো কাপে সেগুলো ক্রীড়াশক্তিকে নির্দেশ করে এবং ম্যালাসাইট (গয়নাতে ব্যবহৃত সবুজ পাথর) দুটি সোনলী স্তর দ্বারা পৃথক করে যেখানে লেখা রয়েছে ‘FIFA WORLD CUP’।এটির নিচে খোদাই করে নিজের দেশের ভাষায় লিখা আছে বিশ্ব কাপ জেতা দেশ গুলোর নাম ও সাল।

  • নোট: ২০৩৮ সালের পর আর জায়গা থাকবে বিজয়ী দেশের নাম লেখার জন্য জায়গা না থাকায় প্রয়োজন হবে আরেকটি নতুন ট্রফি।

 

নতুন বিশ্বকাপ ট্রফির বাজার মূল্য:

তৈরী করার সময় সোনায় মোড়ানো এই ট্রফিটির বাজার মূল্য ছিল প্রায় ৫০ হাজার মার্কিন ডলার।কিন্তু ১৮ ক্যারেট এর ৫ (পাঁচ) কেজি স্বর্ণের এই ট্রফি টির বর্তমান বাজার মূল্য দাড়িয়েছে প্রায় ২০ মিলিয়ন ডলার।

ফিফা বিশ্বকাপ ট্রফির বিশ্ব ভ্রমণ:

বিশ্বকাপ এর আগ মুহুর্তে বিশ্ব ভ্রমণ করে এই ট্রফি যেমন ফিফা জার্মানি বিশ্বকাপ ২০০৬ এর আগে ফিফা বিশ্বকাপ ট্রফি বিশ্ব ট্যুরটি ছিল ৯০ দিন (৩ মাস) দীর্ঘ্য।এই দীর্ঘ তিন মাসে ট্রফিটি ২৯ টি দেশ ভ্রমণ করে।ফিফা দক্ষিণ আফ্রিকা ২০১০ এর আগে ৮৪ টি দেশ, ফিফা ব্রাজিল বিশ্বকাপ ২০১৪ এর আগে ৯০ টি দেশ, ফিফা রাশিয়া বিশ্বকাপ ২০১৮ এর আগে ৫১ টি দেশ ভ্রমণ করে এই মহামূল্যবান ফিফা ট্রফি।আট বছর পর কাতার বিশ্বকাপ ২০২২ এর আগে বিশ্ব ভ্রমণে বাংলাদেশ ও ভ্রমণ করেছে এই ট্রফি।

ধন্যবাদ

www.learningdiagram.com

ফিফা বিশ্বকাপ ট্রফি – Fifa World cup trophy

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *