ফ্রিল্যান্সিং

ফ্রিল্যানসিং – ফ্রিল্যানসিং শুরু করার উপায় – ফ্রিল্যানসিং গাইডলাইন

অনলাইন ইনকাম ইনকাম ফ্রিল্যানসিং

ফ্রিল্যানসিং বা অনলাইন ইনকাম বর্তমান সময়ে সবচেয়ে জনপ্রিয় একটি পেশা হয়ে দাড়িয়েছে।কারণ এর কোনো নির্দিষ্ট সময় বা ধরাবাধাঁ কোনো নিয়ম নেই।এটি একটি মুক্ত পেশা সেই সাথে ইনকামও ভালো যদি আপনার সঠিক গাইডলাইন থাকে।

আজকে আপনাদের এই মুক্ত পেশা নিয়ে সম্পূর্ণ আলোচনা করার চেষ্টা করব।দৈর্য্য ধরে লার্নিং ডায়াগ্রাম এর এই আর্টিকেলটি পড়তে থাকুন।

ফ্রিল্যানসিং কী? ফ্রিল্যানসিং কাকে বলে?

অনেকেই মনে করেন ফ্রিল্যানসিং মানেই দেশে বসে অনলাইন এর মাধ্যমে বিদেশে কাজ করে ডলার (টাকা) ইনকাম করাকেই ফ্রিল্যানসিং বলে।

কিন্তু এইটা পুরোপুরো সত্যি নই

অভিঞ্জদের মতে ফ্রিল্যানসিং মানে যে বিদেশ থেকে কাজ পেলে ফ্রিল্যানসিং হবে তা নয়।ফ্রিল্যানসিং মানে হলো দেশ এর কারো কাজ থেকে অথবা একই বাসার ওপর তালা নিচ তলা, অথবা এইঘর ঐ ঘর থেকেও অনলাইন এর মাধ্যমে যোগাযোগ করে কাজ করা এবং বিনিময়ে অর্থ আধান প্রধান করাকে ফ্রিল্যানসিং বলে।

ফ্রিল্যানসিং করতে কী কী প্রয়োজন?

ফ্রিল্যনসিং কাজের জন্য প্রথমেই যে জিনিসটি প্রয়োজন তা হলো নিজের দক্ষতা।প্রথমে আপনাকে যে কোন একটি কাজে অভিঞ্জ হতে হবে।এখন ফ্রিল্যানসিং চাহিদা অনেক বেশী সেজন্য পুরোপুরো দক্ষ না হয়ে ফ্রিল্যানসিং করা নিতান্তই বোকামির একটি কাজ হবে।সেজন্য আমি বলব যেকোনো কাজে আপনি প্রথমে খুব ভালো করে এক্সপার্ট হন যাতে আপনার সেই কাজে কেউ ভুল ধরতে না পারে।যদি আপনি দক্ষ না হয়ে কাজ শুরু করেন এবং বায়ারের কাজ থেকে কাজ নিন এবং কাজ করে জমা দেওয়ার পর যদি বায়ার কাজে ভুল পায় তাহলে দেশেরও মান ক্ষুন্ন হবে আপনারও বায়ার নষ্ট হবে।যদি আপনি ভালো কাজ করে জমা দেন তাহলে দেখা যাবে সেই বায়ার আপনাকে প্রতিবার কাজ দিবে।

দক্ষতার পাশাপাশি আপনার কিছু ইকুইপমেন্ট লাগবে তা হলো:

1.হাই স্প্রিড ইন্টারনেট ব্যাবস্থা,

2.ডেস্কটপ অথবা ল্যাপটপ,

3.রাত জাগার মানসিকতা,

4.ইংরেজিতে কথা বলে কাজ নেওয়ার মতো দক্ষতা।

একজন সফল ফ্রিল্যানসার হওয়ার উপায়:

সফল ফ্রিল্যানসার হতে হলে দক্ষতা আর দৈর্য্যর বিকল্প নেই।তারপর আপনাকে কিছু রুটিন মেনে কাজ করতে হবে:

নতুন অবস্থায় আপনাকে যে কাজ গুলো করতে হবে:

1.যেহেতু অনেক প্রতিযোগিতা রয়েছে তাই প্রথমে আপনি দেখুন কোন কাজে আপনি দক্ষ, খুব ভালো করে পারেন, সেই কাজটি বাছাই করুন।মনে করুন আপনি ডিজিটাল মার্কেটিং কাজ খুব ভালো করে পারেন কিন্তু গ্রাফিক্স ডিজাইন কাজে অতটা ভালো না তবে ধারণা আছে তাহলে আমি বলব আপনার জন্য ভালো হবে ডিজিটাল মার্কেটিং।গ্রাফিক্স ডিজাইনে দক্ষ হয়ে তারপর সেটাও শুরু করতে পারেন।

আর যদি আপনি কোনো কিছুই পারেন নাহ বুঝেন নাহ একদম নতুন তাহলে আপনার দরকার হবে একটি কোর্স তা না হলে একজন এস্কপার্ট এর সহযোগিতা।

2.আপনি যেই কাজটি করবেন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সেটি নিয়ে নিজেকে নিজে প্রশ্ন করুন:

i) আপনি কি এই কাজে ১০০% দক্ষ কিনা?

ii) আপনার এই কাজে ভালো অভিঞ্জতা আছে কিনা?

iii) বায়ার এর কাজ থেকে কাজ বুজে নেওয়ার পর ত্রুটিমুক্ত ভাবে কাজ করতে পারবেন কিনা?এবং বায়ার আপনার              কাজে সন্তুষ্ট হবে কিনা।

যদি আপনার উপরের সব গুলোতে হ্যাঁ হয় তাহলে আপনি কাজে নামতে পারেন।

3.কাজ এর জন্য একটি ভালো করে রুটিন করুন দিনের কোন সময়টাতে কাজ করবেন।কোন সময়টা নতুন কিছু শিখার জন্য রাখবেন।আপনার স্কিল বাড়ানোর জন্য দিনে একটি নির্দিষ্ট সময় রাখুন।এতে করে নিজের স্কিল বাড়বে

বেশী কাজ পাওয়ার উপায়?

আগেই বলেছি বর্তমানে খুবই প্রতিযোগিতা মূলক একটি পেশা হলো ফ্রিল্যানসিং।এখানে কাজ করতে আপনাকে সর্বপ্রথম যেটি প্রয়োজন তা হলো দৈর্য্য এবং খুবই দক্ষতা।সেই সাথে খুবই সুন্দর করে আপনাকে আপনার প্রোফাইল খুলতে হবে।যাতে বায়ার আপনার প্রোফাইলে আসার পর বুঝতে পারে আপনি সত্যি খুবই দক্ষ একজন পার্সন বা ব্যাক্তি

তারপর আপনাকে আপনার স্কিল প্রচার করতে হবে।বিভিন্ন সো্স্যাল মিডিয়া সাইটে আপনাকে আপনার প্রোফাইল শেয়ার করতে হবে এতে করে বায়াররা যখন ফেসবুক টুইটারে সময় দিবে তথন যদি আপনার প্রোফাইল টুইটারে শেয়ার করা থাকে তাহলে আপনার প্রোফাইলটি তারা ঘুরে দেখার সুযোগ থাকে এতে করে কাজ পাওয়ার সম্ভবনা সৃষ্টি হবে।

খুব ভালো এবং সুন্দর করে সাজিয়ে গুছিয়ে কথা বলতে হবে।যাতে বায়ার এর সাথে আপনার একটি ভালো সম্পর্ক সৃষ্টি হয়।

ফ্রিল্যানসিং সাইট গুলোতে যে কাজ গুলো বেশী হয়:

ফ্রিল্যানসিং সাইট গুলোতে অনেক ধরণের কাজ পাওয়া যায় তবে যে কাজ গুলো করে আপনি ক্যারিয়ার গড়তে পারবেন সেগুলো হলো:

Graphics Design

ফ্রিল্যানসার মার্কেটপ্রেসে অন্যতম জনপ্রিয় কাজ হলো এই গ্রাফিক্স ডিজাইনলোগো ডিজাইন, বিজনেস কার্ড ডিজাইন, ব্যানার ডিজাইন, টি-শার্ট ডিজাইন থেকে শুরু করে সব ধরণের কাজ প্রচুর পরিমাণে হচ্ছে।

Programming

Coding বা Code এর নাম আমরা প্রায় সবাই শুনেছি।এমনকি আপনার হাতের ইলেকট্রনিক্স ডিভাইসটির প্রতিটি সফটওয়ার তৈরী হয়েছে কোডিং এর সাহায্যে।ফেসবুক এর মতো জনপ্রিয় সোস্যাল মিডিয়া সাইটও কোডিং করে তৈরী করেছেন।আপনারা দেখতে চাইলে মাউস এর রাইট বাটন ক্লিক করে “View Page Source” থেকে দেখে নিন অথবা “Inspect” করে।এই রকম ওয়েবসাইট বানানোর কাজ ফ্রিল্যানসার মার্কেটপ্রেসে অনেক আছে।কিন্তু সেজন্য আপনাকে প্রোগ্রামিং জানতে হবে।

Digital marketing

ডিজিটাল মার্কেটিং এর মূল কাজ হলো বায়ারের কোম্পানি অথবা ওয়েবসাইটকে র‌্যাংক করানো এবং মানুষ এর কাছে এর ভালো দিক তুলে জনপ্রিয় করে দেওয়া।এটি অনেক বড় একটি সেক্টর।যার চাহিদা বর্তমানে আকাশচুম্বী।

4.Data Entry

ফ্রিল্যানসিং ক্যারিয়ারে আরেকটি জনপ্রিয় এবং চাহিদা পূর্ণ কাজ হলো ডাটা এন্ট্রি।ক্যারিয়ার গড়তে ডাটা এন্ট্রি কাজটি আপনার জন্য খুব বড় একটি অপশন হতে পারে।কারণ ডাটা এন্ট্রি কাজটি মূলত অফিশিয়াল কাজ তাই এই কাজ গুলো সাধারণত বিভিন্ন বৈদেশিক অফিস থেকে দেওয়া হয় তাই আপনি যদি ডাটা এন্ট্রি কাজটি খুব ভালো করে শিখে নেন এবং ভালো কাজ জমা দিতে পারেন তাহলে আপনাকে তারা তাদের অফিসে মাসিক চুক্তিতে রেখে দিবে এইভাবে অনেক লোক কাজ করছে এবং বড় সুবিধা হলো আপনাকে সেই দেশে না গিয়ে আপনি আপনার রোম থেকে কাজটি করতে পারবেন।

Video Editing

ভিডিও ইডিটিং কাজটি হলো বায়ার আপনাকে একটি ভিডিও দিবে সেই ভিডিওটি এডিট করে দিতে হবে।ভিডিওটি হতে পারে জন্মদিন এর অথবা বিয়ের অথবা বড় কোনো ইউটিউবারের ইউটিউব ভিডিও।ইত্যাদি

S.E.O(Search Engine Optimization)

কোনো ওয়েবসাইটকে গুগল এর প্রথম আনতে এস, ই, ও করা হয়।এতে করে ওয়েবসাইট এর ট্রাফিক বাড়ে এবং জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পায়।

বর্তমান সময়ের জনপ্রিয় কিছু ফ্রিল্যানসিং সাইট:

বর্তমানে কয়েকশ ফ্রিল্যানসিং মার্কেটপ্লেস রয়েছে বাজারে।তার মধ্যে জনপ্রিয় কয়েকটি মার্কেটপ্লেস এর সাথে আজ আপনাদের পরিচয় করিয়ে দিব:

Fiverr.com

ফ্রিল্যানসিং সাইটের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং বিশ্বস্ত ও নাম্বার ওয়ানে রয়েছে ফাইভার।প্রথমে এখানে শুধু ৫ ডলারের কাজ হতো কিন্তু এখন ৫ থেকে কয়েক হাজার ডলার এর কাজ এখানে হচ্ছে।এই সাইটে কাজ করতে বা পেতে হলে আপনার একটি প্রফেশনাল লেভেল এর প্রোফাইল থাকতে হবে একই সাথে যেই কাজটা আপনি পারেন সেই কাজের উপর একটি গিগ থাকতে হবে।অবশ্যই গিগ র‌্যাংক করাতে হবে সঠিক নিয়মে

Upwork.com

১২ মিলিয়ন+ ফ্রিল্যানসার নিয়ে বিশ্বে ফাইভার এর পরেই আপওয়ার্ক এর অবস্থান।এই সাইটেও আপনি Graphics Design, Digital marketing, Programming, এর মতো কাজ এখানে করতে পারবেন।

Freelancer.com

প্রায় ১৩৫০টি আলাদা আলাদা ক্যাটাগরি নিয়ে গঠিত freelancer.com সাইটটি।যেখানে আপনি চাইলে accounting, Data entry, finance, Internet marketing, social media marketing, সহ যেকোনো ক্যাটাগরি নিয়ে কাজ করতে পারবেন।

People per hour

পিপল পার আওয়ার হলো আরেকটি জনপ্রিয় সাইট যেখানে নিয়মিত কাজ হচ্ছে।

Guru.com

ফিল্যানসিং সাইট এর মধ্যে আরেকটি সাইট হলো Guru.com যেখানে এখন অব্দি প্রায় ১৫ লক্ষ কাজ সম্পূর্ণ হয়েছে।

উপরের প্রত্যেকটি সাইটই হলো ইন্টারন্যাশনাল সাইট তাই এগুলো আপনাকে ব্যাংক, পেপাল, পেওনিয়ার এর মাধ্যমে পেমেন্ট করবে।

ফ্রিল্যানসিং সাইট থেকে কত টাকা ইনকাম হবে:

ফ্রিল্যানসিং এমন একটি কাজ বা ব্যাবসা যেথানে ইনকাম এর কোনো লিমিট নেই আপনি যত কাজ করবেন তত ইনকাম হবে।কোনো মাসে দেখা যাবে আপনি ৫০ হাজার+ টাকার বেশি ইনকাম হবে আবার কোনো মাসে দেখা যাবে এক টাকাও হবে না।এটি সম্পূর্ণ নির্ভর করে আপনি কেমন কাজ পারেন তার উপর এবং বায়ার এর কাজ থেকে কেমন কাজ আদায় করতে পারেন।চলুন উদাহরণ সরূপ একটি পেপাল এর ইন্ডিয়ান সার্ভে আপনাদের সামনে উপস্থাপন করি।

চলুন পেপাল এর একটি সার্ভে দেখাই।

Paypal তাদের এক Survey Report এর মধ্যে প্রকাশ করেছে ভারতীয় ফিল্যানসারদের মধ্যে ২৩% বছরে ৬০ লক্ষ টাকা ইনকাম করছে এবং আরও ২৩% ২.৫-৫ লক্ষ টাকা এবং বাকি ৫৪% ০-২.৫ লক্ষ টাকা ইনকাম করছে বছরে।

এই ইনকাম এর মূলে রয়েছে সব কিছু ডিজিটাল হওয়া, কারণ এখন কোম্পানি কর্মী নিয়োগ না দিয়ে ফ্রিল্যানসার দিয়ে কাজ করিয়ে নিচ্ছে অনলাইন এর সাহায্যে।এতে করে তারা অনেক দক্ষ কর্মী পাচ্ছে।

ফিল্যানসিং এর কিছু অসুবিধা:

ফ্রিল্যানসিং কাজ শুরু করার আগে অবশ্যই এর কিছু অসুবিধার কথা আপনার মাথায় রাখতে হবে এবং সেগুলোকে চ্যালেন্স হিসেবে নিতে হবে।

প্রফেশনাল ফিল্যানসার হতে হলে আপনাকে প্রথমেই দৈর্য্য থাকতে হবে কারণ প্রথম অবস্থায় কাজ পেতে কারো অনেক লম্বা সময় লাগে আবার কারো অনেক কম, সেজন্য কাজ না পেলে হতাশ হওয়া যাবে নাহ।বরং চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।এবং সবসময় একটিভ থাকতে হবে বিশেষ করে রাতে কারণ আমাদের দেশে যখন রাত তখন সেখানে দিন হতে পারে।

সব ফিল্যানসারদের যেহেতু বছরের প্রতি মাসে কাজ থাকে নাহ তাই যে মাসে ইনকাম বেশী হবে সেই মাসে সঞ্চয় করার মানসিকতা থাকতে হবে।

ফ্রিল্যানসিং কাজের জন্য কেমন ভাবে রোম সাজানো উচিত:

ফ্রিল্যানসিং কাজ মানেই চেয়ার এর সাথে নিজেকে শিকল দিয়ে বেধে রাখা।তা না হলে আপনি সফল হতে কষ্টকর হয়ে যাবে যদি ভাগ্য আপনার সাথে না থাকে।তাই সারাক্ষণ এক জায়গায় বসে থাকতে এক প্রকার একঘেয়েমি এসে পরে শরীরে এক পর্যায়ে ভালো নাও লাগতে পারে। সেজন্য যাতে এমন কখনো মনে না হয় আপনি আপনার রোমটিকে খুব সুন্দর করে সাজিয়ে তুলুন যাতে করে রোমে ঠুকলেই আপনার মন এর সমস্ত একঘেয়েমে ভাব দূর হয়ে যায়।সেজন্য:

1. আপনার কাজের রোমটি মোটামোটি বড় একটি রোম নিন।

2. অপ্রয়োজনীয় জিনিস সরিয়ে ফেলুন আপনার কাজের জন্য প্রয়োজনীয় জিনিস গুলো শুধু রাখুন।

3. রুমে এলইডি লাইট দিয়ে সুন্দর লাইটিং করতে পারেন।

4. ২/৩টি গাছ রোমে রেখে দিবেন মনটা ভালো লাগবে।

আরও ভালো আইডিয়া পেতে অন্যেদের রোম দেখুন ফেসবুক গ্রুপে পোস্ট করে।

ধন্যবাদ

www.Learningdiagram.com

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *