বর্তমান ইন্টারনেট জগতে ভিপিএন খুবই প্রয়োজনীয় একটি শব্দ।নিষিদ্ধ সাইট গুলোতে অ্যাক্সেস নিতে ভিপিএন খুবই কার্যকরী।সম্প্রতি বাংলাদেশে গেইম ব্যান্ড হওয়ায় এর ব্যাবহার অধিক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে।তাই আ্পনাদের সাথে আগামি কিছুক্ষণ ভিপিএন নিয়ে কথা বলব।
বর্তমানে ভিপিএন এর অপদ ব্যাবহার বেশী লক্ষ করা যায়।কিন্তু সত্যি কি ভিপিএন এর জন্ম এই কারণে হয়েছিল।উত্তরটি হলো নাহ, ভিপিএন (ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক) তৈরী হয়েছিল ব্যাবসায়িক কিছু কাজে।
ভিপিএন কী? What is VPN?
VPN এর পূর্ণরূপ হলো Virtual Private Network. ভিপিএন মূলত একটি সফটওয়্যার।এটি এমন একটি সফটওয়্যার বা সিস্টেম যেটি আপনার প্রাইভেসি বা পরিচয় গোপণ করে আপনার জন্য ইন্টারনেট এর যেসব জায়গায় ঠুকা বারণ সেসব জায়গায় ঠুকতে সহায়তা করবে।
সুতরাং বলা যায় আপনি পাবলিক নেটওয়ার্কে থেকে প্রাইভেট নেটওয়ার্কের সুবিধা পেতে ভিপিএন ব্যাবহার করতে পারবেন।
ভিপিএন এর সুবিধা:
বর্তমান বিশ্বে প্রচুর ওয়েবসাইট আছে।এর মধ্যে অনেক ওয়েবসাইট আছে যেগুলো সব দেশের জন্য উন্মুক্ত না।কিছু কিছু দেশ থেকে বন্ধ।আর যেসব দেশ থেকে বন্ধ সেসব দেশ এর কাতারে আপনার দেশটিও রয়েছে।কিন্তু আপনার কোনো বিশেষ প্রয়োজনে যদি সেসব সাইট ভিজিট করতে হয় তাহলে আপনাকে VPN ব্যাবহার করে নিজের পরিচয় গোপন রেখে ঢুকতে হবে।
যেমন ধরেন আমার ওয়েবসাইটটি থেকে যদি সিয়েরা লিয়ন দেশটিকে ব্লক করে দেই তাহলে সিয়েরা লিয়ন থেকে কেউ আমার সাইটে প্রবেশ করতে পারবে নাহ কিন্তু তাদের যদি আমার সাইটে প্রবেশের প্রয়োজন হয় তাহলে তারা ভিপিএন প্রবেশ করে ঢুকতে পারবে।এই বিষয়টি আরও পরিষ্কার হবে ভি পিএন কীভাবে কাজ করে এ সেকশন টি পড়লে।তবে এখন অনেকের মনে হতে পারে ভিপিএন খুব কাজের জিনিস কিন্তু এই ধারণাটি ভুল ভিপিএন এর কিছু ক্ষতিকর দিক রয়েছে যেগুলো এইখান থেকে জানতে পারবেন।
ভিপিএন ব্যাবহারে আরও কিছু সুবিধা হলো:
1.আপনাকে কেউ কখনো ট্র্যাক বা খুজে বের করতে পারবে নাহ।
2.নিরাপদে ডাটা আদান প্রদান করতে পারবেন।
3.হ্যাকারদের কবল থেকে রক্ষা পাবেন কেননা তারা আপনার সঠিক আইপি (IP= Internet protocol) অ্যাড্রেস লুকায়িত/হাইড থাকবে।
4.ভিপিএন এর ফলে আপনার ইন্টারনেট সার্ভিস প্রভাইডার (আইএসপি) থেকে বেশী স্পিড পাবেন।
5.যেই সাইট গুলো আপনার দেশ ব্লক করা ভিপিএন এর ফলে সেগুলো ভিজিট করতে পারবেন।ইত্যাদি।
ভিপিএন কীভাবে কাজ করে:
ভিপিএন (ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক) মূলত একটি গোপন সুড়ঙ্গ যা দিয়ে আমরা নিরাপদে ইন্টারনেটে ঠুকতে পারি নিজের পরিচয় গোপণ রেখে।ভিপিএন এর সাথে আপনার ডিভাইসটি যুক্ত করার সাথে সাথেই একটি সুড়গ্ঙ তৈরী হয়ে যায় আপনার ডিভাইস আর ইন্টারনেট এর মাঝে।ভিপিএন ছাড়া আপনার ইন্টারনেট সার্ভিস প্রভাইডার (আইএসপি) আপনি ইন্টারনেটে কি করছেন তা বুঝতে পারে কিন্তু যখন আপনি ভিপিএন এর মাধ্যেমে সেই গোপণ সুড়ঙ্গতে প্রবেশ করবেন তখন আপনি আপনার দেশীয় ইন্টারনেট সার্ভিস প্রভাইডার (আইএসপি) থেকে সড়ে চলে যাবেন যেই দেশের ভিপিএন কানেক্ট করবেন সেই দেশের ইন্টারনেট সার্ভিস প্রভাইডার (আইএসপি) এর সার্ভারে যার কারণে আপনার আইএসপি বুঝতে পারবে নাহ আপনি নেটে কি করছেন।আপনি যে সেই সুড়ঙ্গতে প্রবেশ করছেন তা আপনার দেশীয় সার্ভিস প্রভাইডার বুঝতে পারলেও আসলে আপনি কি করছেন ইন্টারনেটে তা বুঝতেও পারবে না একই সাথে সেই সুড়ঙ্গতে ঢুকতেও পারবে না কারণ তাকে সেটার এক্সেস দেওয়া হবে নাহ তাকে সেখানে ঢুকার জন্য সুপার কম্পিউটার এর মত শক্তিশালী কম্পিউটার ও এক দল খুব প্রফেশনাল লেভেলের হ্যাকার প্রয়োজন হবে।
ভিপিএন এর শ্রেণীবিভাগ:
ভিপিএনকে আমরা কয়েকটি ভাগে ভাগে করতে পারি।সেগুলো হলো:
PPTP VPN (Point to Point Tunneling Protocol)
Site to Site VPN
L2TP VPN, Remote Access VPN
IPsec
SSL VPN (Secure Sockets Layer)
MPLS VPN (Multiprotocol label switching)
Hybrid VPN
ভিপিএন ব্যাবহারে সতর্কতা:
ভিপিএন যেমন উপকারী তেমন কিছু ক্ষতিকর দিক আছে।চলুন জেনে নেই ভি পিএন ব্যাবহারের সময় যেসব বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।
1.Five Eyes Alliance ও 14 Eyes Allience চুক্তিবদ্ধ দেশ এর ফ্রি ভিপিএন ব্যাবহার না করা।কারণ এটি সরকারি ভাবে ব্যাবহৃত একটি সিগন্যাল ইন্টেলিজেস্ন শেয়ার চুক্তি।এই চুক্তিবদ্ধ দেশ এর ভিপি এন ব্যাবহার করলে এসব দেশের সরকার কতৃক তথ্য হাতিয়া নেওয়ার ভয় এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব নয়।তাই নিজেকে যারা সর্বোচ্চ সুরক্ষায় রাখতে চান তারা এই চুক্তিবদ্ধ দেশ গুলো এড়িয়ে চলতে পারেন।এই সব দেশ হলো যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, কানাডা।
2.বর্তমান বাজারে অনেক ভিপিএন রয়েছে যা মূলত তৈরী হয়েছে অসাধু চক্র কতৃক।তাদের ভিপিএন গুলোতে রয়েছে ক্ষতিকারক ম্যালওয়ার যা আপনার ডিভাইসটিকে উচ্চ ঝুকিতে ফেলে এমনকি ঐ ম্যালওয়ার এর ফলে ডিভাইসটি হ্যাক হতে পারে এছাড়াও সফটওয়্যার গুলো ইনস্টল করার সময় কিছু সন্দেহজনক পারমিশন চায়।তাই নিম্ন মানের ফ্রি ভিপিএন ব্যাবহার থেকে বিরত থাকুন এবং এগুলো ইনস্টল এর সময় কোন বিষয়ে পারমিশন চাচ্ছে তা লক্ষ করুন বুঝে শুনে পারমিশন দিন।
3.যেসকল ভিপিএন নিয়ে নিশ্চিত যে এই ভিপিএন কখনো অপ্রয়োজনীয় জিনিস পারমিশন চায় নাহ এবং মালওয়্যার নেই সেকল ভিপিএনও আপনাকে কখনো ঝুকিতে ফেলতে পারে যদি আপনি তাদের অফিশিয়াল ওয়েবসাইট অথবা গুগল এর প্লে স্টোর ছাড়া ডাউনলোড করে ব্যাবহার করেন।
সঠিক ভিপিএন ডাউনলোড এর উপায়
ভিপিএন ব্যাবহার এর উদ্দেশ্য কী? নিশ্চয় আপনার গোপনীয়তা রক্ষা করায় ভিপিএন ব্যাবহার এর প্রধান উদ্দেশ্য।কিন্তু আপনি হয়তো জানেন নাহ আপনার অজান্তেই আপনার প্রয়োজনীয় সব তথ্য নিয়ে যাচ্ছে আপনার ব্যাবহার করা ভিপিএন কারণ আপনি যখন ভিপিএন ডাউনলোড করছেন তখন আপনি না বুঝেই হয়তো আপনার ফোন এর সম্পূর্ণ এক্সেস দিয়ে দিচ্ছেন।
সেজন্য ভিপিএন ডাউনলোড এর পূর্বে অবশ্যই দেখে নিবেন কী কী পারমিশন তাকে দিচ্ছেন।যদি দেখেন সে আপনার কাজ থেকে তার জন্য অপ্রয়োজনীয় কিন্তু আপনার জন্য প্রয়োজনীয় এমন জিনিস এর পারমিশন নিচ্ছে (যেমন: ধরেন আপনার গ্যালারির পারমিশন, ফোন এর কল হিস্ট্রি, অথবা ক্যামেরা ইত্যাদি) তাহলে বুজে নিবেন এটা আপনার ক্ষতি বয়ে আনতে পারে সম্ভব হলে এড়িয়ে চলুন অন্যটা দেখুন।
আরও জানুন:
ব্রিটেন এর রাজ পরিবার সম্পর্কে: (বিস্তারিত)
অনলাইন ইনকাম এর উপায়: (বিস্তারিত)
ফ্রি ভিপিএন কী নিরাপদ?
বর্তমান দুনিয়ায় যদি আপনি কিছু ফ্রিতে চান তাহলে বিশ্বাস করুন ভাই/ বোন আপনার মতো বোকা কেউ নেই।এই সময়ে দাড়িয়ে আপনি কিছুই ফ্রিতে পাবেন নাহ।ভিপিএন ও ঠিক তেমনি।আপনি হয়তো জানতাছেন ভিপিএন আপনি ফ্রিতে ব্যাবহার করছেন।কিন্তু সেই ভিপিএনই আপনার অজান্তেই আপনার সব তথ্য চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে।কেননা ফ্রি ভিপিএন এর কিছু ক্ষতিকর দিক আছে।তাছাড়া কিছু কিছু ভিপিএন এ রয়েছে ক্ষতিকারক ম্যালওয়ার।কিছু কিছু ফ্রি ভিপিএন এর মধ্যে কম্পিউটার ভাইরাস / মোবাইল ভাইরাস ও রয়েছে।
তাছাড়া এই ফ্রি ভিপিএন নামমাত্রই ফ্রি।এই ফ্রি ভিপি এন পেইড থেকে বেশী টাকা ইনকাম করে ব্যাবহারকারীর তথ্য চড়া দামে বিক্রি করে।
জনপ্রিয় কিছু ভিপিএন:
উপরের অংশে VPN সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।এখন আপনাদের সাথে কিছু ভিপি এন এর ভালো মন্দ দিক তুলে ধরব:
1.Zoog VPN:
নিরাপত্তা রক্ষার্থে জনপ্রিয় এবং খুব কার্য্যরকরী একটি ভিপিএন হচ্ছে Zoog VPN.
Zoog VPN এর সুবিধা:
এই ভিপিএন এর একটি বড় সুবিধা হলো এর বিরুদ্ধে কোনো তথ্য চুরির অভিযোগ নেই যার কারণে বলতে পারেন এটি কখনো কোনো তথ্য চুরি করে নাহ।শুধু একটি ই-মেইল দিয়ে লগ ইন করলেই হবে।এর পেইড ও ফ্রি ভার্সন খাকলেও ইন্টারনেট ঘতি একই।
Zoog VPN এর অসুবিধা:
এই ভিপিএনে প্রতি মাসে ফ্রিতে সর্বোচ্চ ১০ জিবি নেট ব্যাবহার করতে পারবেন।এবং এর মাত্র ৩টি সার্ভার রয়েছে।
2.Atlas VPN:
এই ভিপিএনটি খুব অল্প সময়ে বাজারে এলেও ভালো ভিপিএন এর মধ্যে জায়গা করে নিয়েছে।২০২০ সালে বাজারে আসা এই ভিপিএনটি এখন বিভিন্ন গুণানের কারণে জনপ্রিয়তার শীর্ষে।চলুন সুবিধা অসুবিধা গুলো জেনে নেই:
Atlas VPN এর সুবিধা:
এই ভিপিএন এর সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো এটিতে কোনো ডাটা লিমিট নেই তাছাড়া পেইড এবং ফ্রিতে সমান স্পিড পাবেন।আপনার কোনো তথ্য এটি চুরি করে নাহ এবং বিশেষ কোনো ক্ষেত্রে আপনার কাছে একটি ইমেইল চাবে।
Atlas VPN এর অসুবিধা:
এর ঘতি একটু কম এবং ফ্রি ভার্সন ব্যাবহার এর সময় আপনাকে কোনো লাইভ চ্যাট অপশন পাবেন নাহ।আরেকটি সমস্যা হলো এরও সার্ভার সংখ্যা ৩।
3.Kaspersky VPN:
জনপ্রিয়তার শীর্ষে থাকা আরেকটি ভিপিএন হলো এই Kaspersky VPN.
Kaspersky VPN এর সুবিধা:
এই ভিপিএনে পাবেন ১৮টি সার্ভার তার সাথে ফ্রি পেইড উভয় ইউজার এর জন্য সমান ঘতির নেট প্রতি সেকেন্ডে ৯৬ মেগাবাইট।
Kaspersky VPN এর অসুবিধা:
এই ভিপিএনটি ব্যাবহারে আপনার তথ্য চুরির সম্বাবনা আছে কারণ আপনার থেকে একটু বেশী তথ্য নেই।আর আপনি যদি ফ্রি ব্যাবহারকারী হন তাহলে প্রতিদিন মাত্র ২০০ এমবি সেট ব্যাবহার করতে পারবেন।
4.Tunnelbear VPN:
জনপ্রিয় ভিপিএন এর মধ্যে আরেকটি হলো Tunnelbear VPN. চলুন বিস্তারিত জেনে নেই:
Tunnelbear VPN এর সুবিধা:
২৩ সার্ভার নিয়ে গঠিত এই ভিপি্নটি খুবই ফেন্ডলী এবং যাতে সহজে ব্যাবহার করা যায় সেই ভাবেই ডিজাইন করা হয়েছে।
Tunnelbear VPN এর অসুবিধা:
এই ভিপিএনে ফ্রি ভার্সনে ডাটা ক্যাপাসিটি মাত্র ৫০০ মেগাবাইট যা খুবই কম।
ধন্যবাদ