আধুনিকতার ছোয়ায় মোবাইল ফোন এখন স্মার্টফোনে পরিবর্তিত হয়েছে।এবং অনেক শক্তিশালীও হয়েছে।ফোনগুলো যেমন আমাদের জীবনমানকে অনেক পরিবর্তন করেছে তেমনি আমাদের জীবনকে নীরবে ধ্বংসও করে দিচ্ছে।মোবাইল ফোন এবং মোবাইল টাওয়ার থেকে যে রেডিয়েশন ছড়াই তা আমাদের জন্য খুবই ক্ষতিকর।
নোট: মোবাইল ফোন এর যাত্রা শুরু হয় নব্বই দশকের শুরুতে।
আসুন এর ক্ষতিকর দিক গুলো জানার আগে আমরা জেনে নেই রেডিয়েশন কী ও এর প্রকারভেদ:
রেডিয়েশন কী? – What is radiation?
ইলেকট্রোম্যাগনেটিক ওয়েভ এর আরেক নাম রেডিয়েশন।
রেডি য়েশন ছড়ায়: মোবাইল, মোবাইল এর টাওয়ার, এক্স-রে মেশিন, মাইক্রোওয়েভ ইত্যাদি তবে সব কিছুর Radia_tion যে ক্ষতিকর তা কিন্তু নয়।এর প্রকারভেদ রয়েছে।চলুন জেনে নেই রেডিয়েশন এর প্রকারভেদ।
রেডিয়েশন এর প্রকারভেদ:
রেডিয়েশন মূলত দুই প্রকার।
1. আয়োনাইজিং রেডিয়েশন
2. নন-আয়োনাইজিং রেডিয়েশন
নিচে একটি চিত্র দেওয়া হলো ওবাঝার সুবিধার্থে:

নন-আয়োনাইজিং রেডিয়েশন:
নন আয়োনাইজিং ক্ষতিকারক নয়।কারণ নন-আয়োনাইজিং রেডিয়েশন হলো লম্বা আকৃতির।উপরের চিত্রের লম্বা ঢেউ অংশ টুকু হলো নন নন-আয়োনাইজিং রেডিয়েশন।সেজন্য এই নন-আয়োনাইজিং রেডিয়েশন যখন কোনো পদার্থে ধাক্কা মারে তখন সেখান থেকে কোনো ইলেকট্রন বের করতে পারে নাহ।কারণ এর ঢেউ অনেক লম্বা এবং এক ধাক্কার কিছুটা পর আরেক ধাক্কা দেই।তাই নন-আয়োনাইজিং রেডিয়েশন দিয়ে কোনো ক্ষতি হয় নাহ।
নন-আয়োনাইজিং রেডিয়েশন ছড়ায়: মোবাইল, মাইক্রোওয়েভ, রেডিও ইত্যাদি থেকে।
মোবাইল রেডিয়েশন ক্ষতিকর নয়, তবে এটির মাত্রা যদি 1.6W এর বেশি হয় তাহলে তা ক্ষতিকারক।আর এই রেডিয়েশন মাত্রা একেক ফোনে একেক রকম হয়।3g ফোনে এক রকম 4g ফোনে আরেক রকম 5g ফোনে আরেক রকম।আবার বাটন ফোনে আরেক রকম হয়।
আয়োনাইজিং রেডিয়েশন:
আয়োনাইজিং রেডিয়েশন সব চেয়ে বেশি ক্ষতিকারক।কারন এর ঢেউ অনেক ঘন এবং পদার্থের মধ্যে অনেক বেশি এবং ঘন ঘন ধাক্কা মারে তাই ইলেকট্রণ বের করতে পারে সেজন্য এই আয়োনাইজিং বেশি ক্ষতি করে।
আয়ো নাইজিং রেডিয়েশন ছড়ায়: এক্স-রে, গামা রশ্নি, ইত্যাদি
মোবাইল ফোনের রেডি-য়েশন লেভেল:
মোবাইল ফোন কিনার সময় আমরা প্রথমে দেখি মোবাইল ক্যামেরা, ব্যাটারি ব্যাকাপ, র্যাম ও মেমোরি কত ইত্যাদি ইত্যাদি।
কিন্তু যেই জিনিসটি আমাদের ক্ষতিকরে সেটি আমরা একবারও চেক করি নাহ।আমরা যদি মোবাইল কিনার সময় রেডিয়েশন এর মাত্রা দেখি তাহলে কিন্তু আমরা বাচতে পারব এর ক্ষতি থেকে।মোবাইল Radiation এর মাত্রা যদি একটি নির্দিষ্ট লেভেল এর বেশি হয় তাহলে এটি আমাদের ক্ষতির কারণ হবে।এই মাত্রা যদি প্রতি কিলো গ্রামে ১.৬ ওয়াটের বেশি হয় তাহলে তা আমাদের শরীরের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাড়াবে।
রেডিয়েশন এর লেভেল চেক করতে ডায়াল অপশনে গিয়ে টাইপ করুন: *#০৭#
এই রেডিয়েশন এর ক্ষতিকর দিক:
1. যেই ফোনে রেডিয়েশন এর মাত্রা যত বেশি সেই ফোন তত বেশি ক্ষতিকর।রেডিয়েশন সবার জন্যই ক্ষতিকর তবে শিশুদের জন্য এটি বেশি ক্ষতি করে।আর যারা ২০ বছরের নিচে তাদের বেশি মাত্রায় মোবাইল ফোন ব্যাবহারে ব্রেইন ক্যান্সার হওয়ায় সম্ববনাও বেশি থাকে।
2. আমাদের শরীরের কোষগুলো একে অপরের সাথে যেভাবে যোগাযোগ করে, সেই যোগাযোগ ব্যাবস্থাকে দারুণভাবে ক্ষতি করে এক্সটারনাল রেডিয়েশন।যার কারণে ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভবনা বেশি থাকে।কিন্তু বাচ্চাদের দেহে ফ্লইড বেশি পরিমাণে থাকে তাই রেডিয়েশন বাচ্চাদের জন্য বেশি ক্ষতির কারণ হয়।
3. যে সব বাসা বাড়ির ছাদে মোবাইল টাওয়ার দেওয়া হয়েছে তার আশপাশে বসবাস করা সকল মানুষ যেমন ঝুঁকিতে থাকে তেমনি কাছাকাছি গাছের ফল ও পাখিও ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
4. শিশুদের অটিজম রোগে আক্রান্ত হওয়ার ক্ষেত্রেও রেডিশন এর দায় রয়েছে।এছাড়াও রেডি য়েশন এর কারণে, জেনেটিক পরিবর্তন, অবসন্নতা, লিউকেমিয়া সহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত করতে পারে এই রেডিয়েশন।
5. মোবাইল রেডিয়েশন এর প্রভাবে আপনার মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাবে।
6. রেডিয়েশন এর কারণে শরীরের ক্রোমোজোম কে ক্ষতি করে, যার ফলে খুব খারাপ ধরণের টিউমার হওয়ার আশংকা থাকে- এবং এক পর্যায়ে ক্যান্সারে রূপ নিতে পারে।
7. দীর্ঘ সময় কানের কাছে মোবাইল ফোন নিয়ে কথা বললে Radiation সরাসরি মস্তিষ্কে সংযোগ হওয়ায় ব্রেইন টিউমার এর আশংকা থাকে।ব্রেইন কোষ দূর্বল হয়।একই সাথে ব্রেইন এর নিউরনের ক্ষতি করে।এক পর্যায়ে এই সমস্যা জটিল হয়।
8. আন্তর্জাতিক নন আয়নাইজিং রেডিয়েশন প্রতিরক্ষা কমিশন (আইসিএআইআরপি) এর মতে রেডি য়েশন এর কারণে কানের বা মস্তিষ্কের টিউমার হওয়ার আশংকা বেশি থাকে।তাদের ওয়েবসাইটে আরও বলা হয়েছে মাথাব্যথা, কাজের ব্যাঘাত, হৃদরোগসহ, নিদ্রাহীনতা, ঘুম ঘুম ভাব এর মতো অনেক গুলো সমস্যার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
9. রেডিয়েশন নিয়ে ভারতের গবেষণায় উঠে আসে এর প্রভাবে আমাদের দেশের জনপ্রিয় অনেক পাখি যেমন: মৌমাছি, চড়ুই, মৌমাছি, টিয়া, শালিক, সহ আরও অনেক পাখি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
রেডি য়েশন থেকে বাচার উপায়:
1. ফোন আসলে রিসিভ করে কানের কাছে আনুন সম্বব হলে হেডফোন অথবা ইয়ারফোন ব্যাবহার করুন আর সব সময় বাম কানে কথা বলার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
2. হাটার সময় ফোনে কথা বলবেন নাহ এতে করে আপনার ফোনের সাথে টাওয়ার এর সংযোগ এর সমস্যা হওয়ায় ফোন থেকে বেশি রেডিয়েশন নির্গত হয়।
3. ঘুমের সময় মোবাইল ফোন মাথার কাছে রাখবেন নাহ এতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে এবং সম্বভ হলে ঘুমানোর দুই ঘন্টা আগে ফোন ব্যাবহার বন্ধ রাখুন।
4. গাড়িতে থাকা অবস্থায় মোবাইল ফোন ব্যাবহার করবেন নাহ কারন গাড়িতে Radia-tion শিল্ড থাকে যার কারনে ফোন রেডিয়েশন এর মাত্রা বাড়িয়ে দেয়।
5. অ্যালার্ম এর জন্য মোবাইল ফোন ব্যাবহার করবেন নাহ কারন এলার্ম এর জন্য আপনি ফোনটিকে আপনার অনেক কাছে রেখেই ঘুমাবেন তাই অ্যালার্ম ঘড়ি ব্যাবহার করুন।
6. অন্ধকারে স্কিনের আলো চোখের ক্ষতি না করলেও প্রয়োজনীয় হরমোন নিংসরণে বাধা দেয়।যা ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায়।
7. প্রয়োজন এর পর ব্লুটুথ. জিপিএস, ওয়াইফাই, ইত্যাদি বন্ধ করে রাখুন কারণ এই গুলোর রেডি-য়েশন দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতির কারন হয়ে দাড়াবে।
8. শোবার বা ঘুমানোর রোমে রাউটার রাখবেন নাহ।১১টার পরে রাউটার বন্ধ করে দিন পারলে আরও আগে বন্ধ করে দিবেন।
9. নিজ বাসায় মোবাইল টাওয়ার স্থাপন করতে দিবেন নাহ আর্থিক ক্ষতি হলেও স্থ্যাস্থের জন্য উপকারি এবং বাসা নেওয়ার ক্ষেত্রে টাওয়ার থেকে যতটা দূরে সম্ভব বাসা নিন।
10. চালু অবস্থায় মোবাইল ফোন হাতে বা ব্যাগে রাখুন পকেটে রাখবেন নাহ।পকেটে রাখলে মোটা কভার ব্যাবহার করুন।
10.পকেটে মোবাইল রাখার অভ্যাসকে পরিহার করুন আর রাখলেও মোটা কভার ব্যাবহার করুন।বেশি ভালো হয় ব্যাগে অথবা হাতে রাখলে।
11. ঘুমানোর সময় মোবাইল ফোন কমপক্ষে ৩ থেকে ৪ ফুট অথবা আরও বেশি দূরত্বে রাখুন।সম্বভ হলে অন্য ঘরে রাখুন।
সতর্কতা:
মোবাইল আমাদের জীবনে এমন ভাবে মিশে গেছে যে এটা ছাড়া আমাদের চলা দায়।কিন্তু সব জিনিসের মধ্যে ভালো মন্দ থাকে তেমনি মোবাইল ফোনেরও যেমন ভালো দিক আছে তেমনি খারাপ দিক হলো রেডিয়েশন।মোবাইল ছাড়া আমাদের জীবন চলা দুষ্কর ঠিকই কিন্তু চাইলে আমরা এর ব্যাবহার নিয়ন্তণে রেখে এবং থেকে কিছুটা হলেও বেচে চলাচল করতে পারব।
গবেষণায় জানা গেছে ১৯৭৫ সালের পর থেকে ব্রেইন ক্যান্সার ও হার্ট অ্যাটাক এর রোগী বেড়ে গেছে।আর এই কারণ হিসেবে দায়ী করা হয় মোবাইল ফোন এর অতিরিক্ত ব্যাবহার।
তাই আসুন আমরা নিজেরা আগে মোবাইল ফোন ব্যাবহারে সতর্ক হয় এবং অন্যকে সতর্ক করি।
রেডিয়েশন এর ক্ষতিকর দিক নিয়ে বিশ্ব স্বস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদনটি পরতে এখানে ক্লিক করুন
ইংরেজিতে একটি প্রবাদ আছে:
Prevention is better than cure : প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ উত্তম
ধন্যবাদ