সমুদ্র রহস্য

সমুদ্র রহস্য আমাদের পৃথিবীর একটি বড় অংশ দখল করে আছে সমুদ্র।আমাদের পৃথিবীর ৪ ভাগের ৩ ভাগ পানি ১ ভাগ স্থল।সমুদ্রকে পৃথিবীর প্রাণ বলা হয়।পৃথিবীকে ঠান্ডা রাখতে সমুদ্রের ভূমিকা অপরিসীম।এই সমুদ্রের পানি লবণাক্ত হলেও এই খানে রয়েছে ছোট বড় প্রাণী ও মাছ।আর এই আর্টিকেল এর মাধ্যমে আপনাদের জানাবো সমুদ্র রহস্য নিয়ে চলুন জেনে নেই বিস্তারিত:

সমুদ্রের গভীরতা:

কখনো ভেবে দেখেছেন একজন মানুষ সমুদ্রের গভীরে কতটা যেতে পারে।মহাকাশে যাওয়ার জন্য রকেট এর প্রয়োজন হলেও সমুদ্রের ক্ষেত্রে বিষয়টা ভিন্ন।মহাকাশ গবেষণা থেকে সমুদ্রে গবেষণা কাজটা বেশি ভয়ংকর।একটি নির্দিষ্ট গভীরতা জয় করতে কোনো সরঞ্জাম এর প্রয়োজন না হলেও অতিরিক্ত গভীরতার জন্য অবশ্যই যান এর প্রয়োজন পরে।একজন সাধারণত মানুষ কোনো সরঞ্জাম ছাড়াই সমুদ্রে ড্রাইভ দিতে পারে তবে সে ৬ মিটার এর গভীরতায় কোনো ভাবেই যেতে পারে নাহ।তবে অনেক ডুবুরি ইকুপমেন্ট সহ/ছাড়া ১০০ মিটার গভীরে যেতে পারে তবে সমুদের গভীরতার কাছে এই গভীরতা কিছুই নাহ।(সমুদ্রের গভীরতা সম্পর্কে ধারণা পেতে পুরো আর্টিকেলটি পড়ার অনুরোধ রইলো) এই গভীরতা সমুদ্রের প্রথম স্তরের গভীরতা Epipelagic Zone থেকেও অনেক উপরে কারণ আমরা জানি Epipelagic Zone (এপিপেলাজিক জোন) এর গভীরতা ২০০ মিটার।

Epipelagic Zone এপিপেলাজিক জোন সম্পর্কে:

Epipelagic Zone (এপিপেলাজিক জোন) এ সালোসংশ্লেষণ এর জন্য পর্যাপ্ত সূর্যালোক রয়েছে।Epipelagic Zone (এপিপেলাজিক জোন) এর গভীরতা ২০০ মিটার।এই জোনে রয়েছে অনেক মাছ এবং এইখানে বাস করে ডলফিন হাঙ্গর।কিন্তু অনেকের মনে প্রশ্ন আসতে পারে একজন মানুষকি আরও গভীরে যেতে পারে তবে অনেকে হয়তো না করবেন তবে এটি সম্বভ করেছে আহমেদ গাভের ৩২০ মিটার পর্যন্ত স্কুবা ড্রাইভ করে গিয়েছেন।এর মানে তিনি মিডনাইট জোন নামে পরিচিত।

Midnight zone মিডনাইট জোন সম্পর্কে

যেটি সমুদ্রে পৃষ্টে এক কিলোমিটার থেকে চার কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত অথবা ( ১০০০ থেকে ৪০০০ মিটার বা ৩,৩০০ – ১৩,০০০ ফুট )।এই স্তরে মিলিটারি সাবমেরিন গুলোও যেতে পারে নাহ।এই খানে সূর্যের আলো প্রবেশ করা অসম্বভ।এই খানে কিছু প্রাণী বসবাস করে যেই গুলো অবিশ্বাস্য বৈশিষ্ট্যর অধিকারি।এই বসবাস করা বেশিরভাগ প্রাণী বা মাছের বড় বড় চোখ থাকে এছাড়াও এদের থাকে ভিউ লুমিন্যান্স যার কারণে তাদের দেহ থেকে এক ধরণের আলো বিচ্ছুরিত হয় যার কারণে অন্ধকারেও তাদের উপস্থিতি বুঝা যায়।সমুদ্রের গভীরতা কিন্তু এই খানেই শেষ নয়।তাহলে কীভাবে এর চেয়ে গভীরে যাওয়া যায় যেখানে সাবমেরিন ও পৈাছাতে পারে না যেটি খুবই শীতলতম স্থান।

হাডাল জোন Hadal Zone সম্পর্কে

সমুদ্রের গভীরতম অঞ্চলকে বলা হয় হাডাল জোন (Hadal Zone) এই হাডাল জোন সমুদ্রের ৬ কিলোমিটার গভীরতা থেকে শুরু হয়ে একেবারে নিচ পর্যন্ত বিস্তৃত।আপনি জানলে অবাক হবেন এই ধরণের জায়গাতেও জীবন যাপন চলছে।ডিসকো জেলি, শমুক মাছ, ওয়াটার ড্রাগণ এর মতো মাছ।এই মাছ গুলো অফিডিয়ান্ট বংশের অন্তর্গত।

বিঞ্জানীরা এইসব প্রাণীদের আরও ভালো ভাবে অধ্যায়ণ করার জন্য সেলফ কন্ট্রল ওয়াটার ক্রাফট ব্যাবহার এর পরিবর্তে রিমোট কন্ট্রল এর ব্যাবহার করছে কারণ সেলফ কন্ট্রোল যান ব্যাবহার করে তার সর্বচ্চ গভীরতায় নামার পরে দীর্ঘ সময়ের এর জন্য সেই স্থানে স্থির থাকতে হতো ক্যাবলের মাধ্যমে যতক্ষণ না কমান্ড পাওয়া যেত কখনো কখনো এই কাজ বিপজ্জনকও হয়ে উঠত ২০১৪ সালে নিরিয়াস নামক ওয়াটার ক্রাফট একটি মার্কিন পতাকা নিয়ে নিউজিল্যান্ড এর কাছাকাছি অবস্থিত কার্মাট্রেন্ড ট্রেঞ্চএ নামতে গিয়ে ১০ কিলোমিটার গভীরে গিয়ে সমুদ্ররে উচ্চ চাপের ফলে এর ক্যাবল ছিড়ে যায় ফলে স্বাভাবিক ভাবে এই পাইলট এর শরীর সমাদি হয়।সেই সময় এটিই ছিল এক মাত্র কার্যকরী জল যান।যা এই ধরণের মিশনের জন্য ডিজাইন করা হয়েছিল যার কারণে এই এটি হারিয়ে গবেষণা কাজে বিরতি ঘটে।

মারিয়ানা ট্রেঞ্চ

সমুদ্রের সবচেয়ে গভীরতম স্থান হলো মারিয়ানা ট্রেঞ্চ যেটি প্রশান্ত মহাসাগরের পশ্চিমে অবস্থিত এবং এই স্থানের গভীরতা ১১,০৩৪ মিটার।যেখানে পানির চাপ সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে ১০০ গুণ বেশি।এত পানির প্রেসারের মধ্যে বেচে থাকার জন্য বিঞ্জানীরা উদ্ভাবন করে Deep Sea Challenger।এটি ব্যাবহার করেন ২০১২ সালে অষ্কার বিজয়ী পরিচালক জেমস ক্যামারুন। Deep Sea Challenger  জল যান এর সাহায্যে জেমস ক্যামারুন মারিয়ানা ট্রেঞ্চ এর ১০,৯০৮ মিটার নিচে পৈাছেছিলেন।তার এই অভিযান এর প্রভাব স্পষ্ট হয়ে যায় Avatar 2 সিনেমা থেকে।

Mariana trench bottom exploration এর অভিযান এর ইতিহাসে একমাত্র মানবচালিত সাবমার্সেবল হলো Trieste যা ব্যাবহার করা হয়েছিল ১৯৬০ সালে এটি Bathyscaphe ল্যাফটেন্যান্ট ডন ওয়ালাস (Lieutenant Don Walsh) জ্যাক পিকার্ড (Jacques Piccard) চালিয়ে সমুদ্রের নিচে পারি দিয়েছিলেন।পিকার্ড হলো এমন একজন ইন্জিনিয়ার যিনি সর্বপ্রথম সমুদ্রের তলদেশে নেমেছেন।তার ১০ বার অভিযান এর পুনঃরাবৃত্তি করা হয়েছে এবং এতে ১৩ জন ব্যাক্তি যুক্ত ছিলেন।এই অভিযানের শঙ্খা মহাকাশচারীদের থেকে ১০ গুণ কম কারণ মহাকাশের চেয়ে সমুদ্র অনেক বেশি ভয়ংকর এবং রহস্যময় যার রহস্যভেদ করা খুব কঠিন কাজ এর একটি।

পৃথিবীর বাহিরের সমুদ্র নিয়ে:

পৃথিবীতে অনেক সমুদ্র আছে যেগুলো অধিক ভয়ংকর কিন্তু এটিতো পৃথিবীর সমুদ্র তবে খুব কম লোকই জানে পৃথিবীর বাহিরেও সমুদ্র রয়েছে।সেই গুলোর ভয়াবহতা সঠিক ও শুদ্ধ রূপে বর্ণনা প্রায় অসম্বভ।সেই সমুদ্রটি হলো বৃহস্পতির উপগ্রহ ইউরোপাতে বরফের আস্তরণের দেখা মিলেছে।বিঞ্জানীরা বলছেন এই বরফের আস্তরণের পুরুত্ব ১৬ থেকে ২৫ কিলোমিটার এবং এর নিচে একটি সমুদ্র রয়েছে এবং এই খানে প্রাণের অস্তিত্ব থাকলেও থাকতে পারে।এবং সেই প্রাণী গুলো পৃথিবীর জলজ জীবের মতো হবে।

বাহিরের সমুদ্রে গবেষণার আগে নাসা চাচ্ছে পৃথিবীর সমুদ্র স্মপর্কে আগে জানতে।আপনারা জানলে অবাক হবেন যে নাসা এখনো পৃথিবীর সমুদ্রের ৭৫ ভাগ এর বেশি গবেষণা করে উঠতে পারে নি।এই অজানা ভাগে রয়েছে Apyssopelagic Zone বা The Midnight Zone এই খানে বসবাস কারী প্রাণীগুলো পানির অতি উচ্চচাপকে সহ্য করতে পারে।নাসা এই সমুদ্রে ডোপ দিলে আমরা আরও অনেক তথ্য পাব এই খানের আর সেই জন্য নাসা একটি ডুবো ড্রোণ তৈরী করছে যার নাম Orpheus এটিতে থাকবে উচ্চ সংবেদনশীল ক্যামেরা ও সেন্সর।যে রকমটা ব্যাবৃত হয়েছিল মঙ্গল গ্রহে পাঠানো যান রোভার এর ক্ষেত্রে।এই ডোনটি অপেক্ষাকৃত ছোট হবে এবং ওজন হবে ২৫০ কেজি।এবং এটি একটি সিফেটিক ফোম দিয়ে তৈরী হবে যা একটি ভাসমান জৈবীক উপাদান।যা এটিকে আরও শক্তিশালী করে তুলবে এবং এটির ফ্ল্যাশ লাইট উচ্চমানের ছবি সংগ্রহ করতে সহায়তা করবে।

এতো উন্নতি প্রযুক্তির কারণে হয়তো আমরা জানতে পারব আরো সমুদ্রের নিচে বসবাস করা প্রাণী সম্পর্কে জানতে পরব জানা অজানা আরও অনেক রহস্য সম্পর্কে এটি হয়তো খুজে পেতে সহায়তা করবে পৃথিবীর সবচেয়ে শাক্তিশালী হাঙ্গর সাদা হাঙরকে জানতে পারি মানুষের অজান্তে সমুদ্রের নিচে বসবাস করা ভীন গ্রহী প্রাণীকে অথবা বারমুডার রহস্য।

 

ধন্যবাদ

www.learningdiagram.com

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Sorry