হাবল টেলিস্কোপ

হাবল টেলিস্কোপ – Hubble Telescope

মহাকাশ ও সৈারজগৎ

মহাকাশকে আমাদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে হাবল টেলিস্কোপ এর ভুমিকা অপরিসীম।মহাকাশ এর বহু ইতিহাস এর সাক্ষী এই হাবল টেলিস্কোপ।মহাকাশ এর বহু দূরের বস্তু এই যন্ত্রের সাহায্যে দেখা সম্বভ হয়েছে।

এই আর্টিকেল এর মাধ্যমে আপনাদের এই হাবল টেলিস্কোপ সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য দিব:-

হাবিল টেলিস্কোপ তৈরীর ইতিহাস:

স্পাইগ্লাস আবিষ্কার থেকে Hubble Telescope আাবিষ্কার এর কথা বিঞ্জানীদের মাথায় আসে। আমরা প্রায়ই সবাই বিঞ্জানী গ্যালিলিও এর নাম শুনেছি এই স্পাইগ্লাস উন্নত ও ব্যাবহারে তার অবদান অতুলনীয়।আগে জানি স্পাইগ্লাস কী?

স্পাইগ্লাস হলো এমন একটি বস্তু যা দূরের জিনিসকে কাছে থেকে দেখতে সহায়তা করে।

এই স্পাইগ্লাস দিয়ে বিঞ্জানী গ্যালিলিও মহাকাশ সম্পর্কে গবেষণা করেছেন এবং তার গবেষণা কালে শনির বলয় দেখতে সমস্যার সম্মুখীন হন আর এই সমস্যার কারণ ছিল আমাদের বায়ুমন্ডল মহাকাশ থেকে আগত আলোকে দেখতে বাধা দিচ্ছিল তাই মহাকাশ এর চিত্র ধারণ সম্বভ হচ্ছিলো নাহ।আর এই জটিল সমস্যা সমাধান করতে বিঞ্জানীরা একটি এমন টেলিস্কোপ এর অভাব অনুভব করে যা দিয়ে মহাকাশ এর সুন্দর চিত্র দেখা সম্বভ।আর তার প্রেক্ষিতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ১৯৬৪ সালে জ্যোতির্বিদ লাইম্যান স্পিটজার এমন টেলিস্কোপ এর তৈরীরর প্রস্তাব দিলেও ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অভ সায়েন্স এর অনুমোদন পেতে কয়েক বছর পার হয়ে যায়।

পরে ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অভ সায়েন্স থেকে ১৯৬৯ সালে Hubble Telescope এর রূপরেখা তৈরীর নির্দেশ দেয়।এদিকে মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা প্রকল্প হাতে নিয়ে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছিল কিন্তু অবশেষে ১৯৭১ সালে ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অভ সায়েন্সের প্রশাসক জর্জ ল স্পেস টেলিস্কোপ তৈরীর অনুমোদন দিলে এই প্রকল্পের জন্য নাসা তাহবিল এর সংকটে পরে তারপর ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি ও কংগ্রেস এর প্রচেষ্টায় এই সমস্যা মুক্তি পায় নাসা।এরপর ১৯৮৬ সালে স্পেস শাটল চ্যালেঞ্জ এর দূর্ঘটনায় ৭ জন নভোচারী মারা যায় যায়।তাই আবার বাধার মুখে পড়ে হাবল টেলিস্কোপ এর কাজ কেননা স্পেস শাটল আবার আবার চালু না হলে হাবলের কাজে অগ্রগতি সম্বভ নয়।এরপর সমস্ত জল্পনা কল্পনা ভেদ করে সব সমস্যা অতিক্রম করে ২৪ এপ্রিল ১৯৯০ সালে হাবল টেলিস্কোপ উৎক্ষেপণ করা হয়

হাবল টেলিস্কোপ নাসা তৈরী করলেও যে কোনো বিঞ্জানী অনুমতি সাপেক্ষে এটি ব্যাবহার করতে পারে।প্রতি বছর ১০০০ আবেদন বিশ্লেষণ এর পর ২০০ জন বিঞ্জানী হাবল টেলিস্কোপ ব্যাবহার এর অনুমতি পায়

আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন কী বিস্তারিত

হাবল টেলিস্কোপ এর নামকরণ:

হাবল টেলিস্কোপ এর নাম করা হয় বিঞ্জানী আমেরিকান জ্যোতির্বিদ এ্যাডউইন পি. হাবল এর প্রতি সম্মান ও শ্রদ্ধা জানিয়ে

মহা জগতের বস্তু সমূহ ব্লু-শিফ্ট ও রেড-শিফ্ট দেখিয়ে প্রমাণ করে এই মহাবিশ্ব সম্প্রসারণশীল এবং একটি বস্তু আরেকটি থেকে প্রতি নিয়ত দূরে সরে যাচ্ছে বলে ধারণা দেন বিঞ্জানী এ্যাডউইন পি. হাবল, বিঞ্জানী এ্যাডউইন পি. হাবল এর এই তত্ত্বের উপর ভিত্তি করে মহাবিস্ফোরণ তত্ব প্রতিষ্ঠা পায়।এই জন্য বিঞ্জানী এ্যাডউইন পি. হাবল, এর প্রতি সম্মান জানিয়ে হাবল টেলিস্কোপের নাম করা হয়।

হাবল টেলিস্কোপ এর অবস্থান ও বৈশিষ্ট্য:

১. হাবল টেলিস্কোপ এর আয়তন ৪৩.৫ ফিট।

২. হাবল টেলিস্কোপকে শাটল ডিস্কভারির সাহায্যে ১৯৯০ সালে ২৪ এপ্রিল মহাকাশে প্রেরণ করা হয়।এই মিশন এর নামকরণ করা হয়, STS-31

৩. হাবল টেলিস্কোপকে পৃথিবীক থেকে ৩৪০ মাইল বা ৫৯৬ কিলোমিটার দূরে ১৯৯০ সালে ২৫ এপ্রিল অর্থাৎ উৎক্ষেপণের পরের দিন স্থাপন করা হয়।

৪. প্রতি মিনিটে হাবল টেলিস্কোপ ২৭০০০ কিলোমিটার অতিক্রম করে অর্থাৎ ৯৫ মিনিটে একবার পৃথিবীকে পরিভ্রমণ করতে পারে।

হাবল টেলিস্কোপ তৈরীর উপকরণ:

১. ১৯৯০ সালে হাবল টেলিস্কোপটি তৈরিতে খরচ হয় ৪.৭ বিলিয়ন ডলার, যা বর্তমান সময়ে ৯ বিলিয়ন ডলার এর বেশি।

২. হাবল টেলিস্কোপে দুটি মিরর ব্যাবহার করা হয়েছে প্রাইমারি ও সেকেন্ডারি।

৩. হাবল টেলিস্কোপ এর প্রাইমারি মিরর এর ডায়ামিটার ২.৪ মিটার বা ৯৪.৫ ইঞ্চি অন্যদিকে সেকেন্ডরি মিরর এর ডায়ামিটার ১২ ইঞ্চি।

৪. ১৯৯৯ খ্রিষ্টাব্দের হাবল টেলিস্কোপে যুক্ত হয় চন্দ্র এক্স টেরিস্কোপ কারণ দেড় মাইল দূর থেকে দেড় ইঞ্চির লেখা পড়া সম্বভ এই চন্দ্র এক্স দিয়ে।

৫. হাবল টেলিস্কোপে ব্যাবহার করা হয়েছে ওয়াইড ফিল্ড ক্যামেরা ৩ যার সাহায্যে অতিবেগুনী রশ্মির কাছাকাছি রশ্মি, দৃশ্যমান আলোকরশ্মি, আর ইনফ্রারেডের কাছাকাছি রশ্মি দেখা যায় বলে জানানো হয়েছে।

৬. Hubble Telescope নিজে সচল থাকার জন্য ২৫ ফুট এর সোলার প্যানেল রযেছে যার সাহায্যে টেলিস্কোপটি সূর্য মামার থেকে ৫৫০০ ওয়াট বিদ্যুৎ পায়।এছাড়া বিদ্যুৎ সঞ্চয়ের জন্য রয়েছে ৬টি নিকেল-হাইড্রোজেন ব্যাটারি।

৭. হাবল টেলিস্কোপ মহাকাশে প্রেরণের সময় ওজন ছিল প্রায় ২৪,০০০ পাউন্ড বা (১০,৮০০ কেজি)।তবে এটি যদি পৃথিবীতে আবার ফিরে আসে তবে তার ওজন দাড়াবে প্রায় ২৭০০০ পাউন্ড (১২,২০০ কেজি)।

হাবল টেলিস্কোপ এর উপকারিতা ও বৈশিষ্ট্য:

১. হাবল টেলিস্কোপ প্রথম ছবি তোলে ১৯৯০ সালের ২০ মে যার নাম ছিল Star cluster NGC 3532।এর পর থেকে লক্ষাধিক ছবি পাঠিয়েছে যা বিশ্লেষণে বেরিয়ে এসেছে মহাবিশ্বের বয়স, কোয়াযারদের আর ডার্ক এনার্জি বা কৃষ্ণশক্তি সম্পর্কে।

২. হাবল টেলিস্কোপ দিয়ে উজ্জ্বল দৃশ্য দেখা সম্বভ, হাবল টেলিস্কোপ এর উজ্জ্বল দৃশ্য দেখার ক্ষমতা ০.০৫ আর্কসেকেন্ড। গ্যালালিক্স অবস্থান জানতে রয়েছে হাবল টেলিস্কোপ এর ভূমিকা।

৩. হাবল টেলিস্কোপ প্রতি সপ্তাহে যে পরিমাণ তথ্য নাসাকে দিয়েছিল তার পরিমাণ ছিল ১২০ জিবি (গিগাবাইট)।ম্যাগনেটো-অপটিক্যাল ডিস্ক এই সব তথ্য সংরক্ষণ করা হয়।

৪. জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা ১৮ হাজার এর বেশি বৈজ্ঞানিক বই প্রকাশ করতে হাবল এর প্রেরিত ডাটা ব্যাবহার করেছেন।

৫. সচল থাকা কালীন ১৫ লক্ষেরও বেশি পর্যবেক্ষণ সম্পন্ন করেছে বিঞ্জান এর এই আবিষ্কার।

৬. সচল থাকা অবস্থায় Hubble Telescope পৃথিবীর কক্ষপথ ধরে ৪ বিলিয়ন মাইল (৬ বিলিয়ন কিলোমিটার) পথ পারি দিয়েছে।

৭. হাবল টেলিস্কোপ ১৩.৪ বিলিয়ন আলোকবর্ষেরও বেশি দুর এর ছাবি তুলতে সক্ষম। হাবল টেলিস্কোপ জ্যোতির্বিজ্ঞানে বিপ্লব তৈরী করেছে উদাহরণস্বরূপ সঠিকভাবে মহাবিশ্বের সম্প্রসারণের হার নির্ণয়।

৮. এক বছরে হাবল প্রায় ১০ টেরাবাইট নতুন ডাটা পৃখিবীতে পাঠাতে পারে। এবং এর প্রেরিত সংরক্ষণাগারটির পরিমাণ বর্তমানে ১৫০ টেরা বাইট এর বেশি।

৯. হাবল টেলিস্কোপ ১১৫-২৫০০ ন্যানোমিটারে আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্যে দেখতে পারে।

হাবল টেলিস্কোপ তৈরীতে যে ভুল গুলো হয়েছিল:

হাবল টেলিস্কোপ মহাকাশে উৎক্ষেপনের পর লেন্স ও যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে মহাকাশের নিখুত ছবি তুলা সম্বভ হচ্ছিল নাহ।আর এই সমস্যা সমাধানের জন্য স্পেস শাটল ১৯৯৩ সালে ৫ দিনের এক মহাকাশ যাত্রায় ৭ জন নভোচারী পাঠায়।মিশনে ওয়াইল্ড ফিল্ড প্ল্যানেটরি-২ সহ আরও একটি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়।প রে১৯৯৩ সালের ডিসেম্বর মাসে নিথুঁত ছবি তোলে।

১৯৯৩,১৯৯৭,১৯৯৯,২০০২ এবং ২০০৯ সালে হাবল টেলিস্কোপকে পাচ বার সংস্কার করা হয়।

হাবল টেলিস্কোপ যেভাবে পৃথিবীতে ছবি পাঠায়:

হাবল টেরিস্কোপ এর পৃথিবীতে ছবি পাঠানোর ক্ষেত্রে দুটি কম্পিউটার ও একটি এন্টেনা নিযুক্ত আছে।এবং পৃথিবী থেকে প্রকৌশলীগণ বিভিন্ন দিক নির্দেশনা প্রধান করে পরে কম্পিউটার গুলির একটি দিক নির্দেশনা পরিচালনা করে ও অন্যটি সফল ভাবে তথ্য সংগ্রহ ও পাঠানোর কাজ করে।

ধন্যবাদ

www.learningdiagram.com

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *